রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

জ্বালানি আসছে সেপ্টেম্বরে, পরিবহনে কঠোর নিরাপত্তা

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মোতাবেক কাজ এগিয়ে নেওয়ায় পারমাণবিক জ্বালানি প্রাপ্তির সব ধাপ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় ২০০৯ সালে। ধীরে ধীরে প্রকল্পের জন্য চুক্তি সই, প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু—সব পর্ব শেষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে।

রূপপুর প্রকল্পের জন্য চলতি সেপ্টেম্বরে আসছে পারমাণবিক জ্বালানি।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন (কমিশনিং) শুরুর আগে জ্বালানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া সবচেয়ে বড় ধাপ।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মোতাবেক কাজ এগিয়ে নেওয়ায় পারমাণবিক জ্বালানি প্রাপ্তির সব ধাপ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শৌকত আকবর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের প্রথম ব্যাচের জ্বালানি উৎপাদনের কাজ চলছে। এ মাসেই পারমাণবিক জ্বালানি দেশে আসবে। পারমাণবিক জ্বালানি প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানোর পর রূপপুর প্রকল্প নির্মাণ পর্যায় থেকে পারমাণবিক স্থাপনায় উন্নীত হবে।'

এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলাসহ সবগুলো ধাপের কাজ এগিয়ে চলেছে বলে জানান তিনি।

এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের অনুমোদন দেওয়া হয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

আইএইএর নির্দেশনা অনুযায়ী শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি অথরিটি গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে (বিএইসি) পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণের লাইসেন্স দেয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রুশ প্রতিষ্ঠান বাররুস প্রজেক্ট এলসিসিকে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি অথরিটির অন্তর্ভুক্ত নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি ইনফ্রাস্টাকচার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. সত্যজিত ঘোষ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইএইএর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'

আইএইএর সেফগার্ড মিশন এ জন্য বাংলাদেশে কাজ করছে। মিশনের উচ্চ পর্যায়ের দল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে গত ২০ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।

এর আগে, জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের লাইসেন্স দেওয়ার পর থেকেই রূপপুরের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়াম নিয়ে আসার প্রস্তুতি শুরু হয়।

রুশ পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের গণসংযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জন্য নতুন জ্বালানির প্রথম ব্যাচের উৎপাদন শেষ হয়েছে।

গত ৯ আগস্ট রোসাটমের জ্বালানি কোম্পানি টেভেলের প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কন্সেন্ট্রেটস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানির এক্সসেপটেন্স নিরীক্ষা শেষ হয়।

এতে অংশ নেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, এনসিসিপি, টেভেল ও এটমস্ত্রয়এক্সপোর্টের (এএসই) প্রতিনিধিরা।

নিরীক্ষাটি সফলভাবে শেষ হওয়ার পর এক্সসেপটেন্স প্রটোকলে সই করেন ড. শৌকত আকবর এবং এএসই ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও নির্মাণ প্রকল্পের অপর প্রকল্প পরিচালক আলেক্সি দেইরি।

প্রটোকল সই হওয়ার পর এই নতুন পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনকারী কারখানা থেকে বাংলাদেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পায়। চলতি সেপ্টেম্বরেই এই জ্বালানি বাংলাদেশে আসবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ড. শৌকত আকবর ডেইলি স্টারকে জানান, পারমাণবিক জ্বালানি আকাশপথে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে পৌঁছাবে এবং এরপর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিমানবন্দর থেকে প্রকল্প এলাকায় নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পারমাণবিক জ্বালানি বিমানবন্দরে খালাস করা, পরিবহন কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্প এলাকায় পরিবহনের ডেমোও শেষ হয়েছে।

তবে, রূপপুর প্রকল্পের জ্বালানি পরিবহনে আরও বেশি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে এ ধরনের পরিবহনে বিমা গুরুত্বপূর্ণ হলেও রূপপুরের ক্ষেত্রে তা না থাকায় কিছুটা ঝুঁকি তৈরি করেছে।'

'পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহার করার আগ পর্যন্ত জ্বালানি নিয়ে ঝুঁকির কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া, পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তা থাকায় এ নিয়ে আপাতত দুশ্চিন্তার কারণ না থাকলেও, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বিমার বিষয়টি আগে থেকেই ভাবা উচিত ছিল,' যোগ করেন তিনি।

ড. শৌকত আকবর বলেন, 'পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহনে এর আগে কোথাও দুর্ঘটনার রেকর্ড নেই। এ ছাড়া, সড়ক পথে প্রকল্প এলাকায় পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, নিরাপত্তার দায়ভার আমাদের ওপর বর্তায়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সব নিয়ম মেনেই জ্বালানি পরিবহন ও সংরক্ষণের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।'

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি অনুসারে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩ বছরের জন্য জ্বালানির দাম দিতে হবে না।

বাংলাদেশকে যে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তা বর্তমানে সক্রিয় ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টরভিত্তিক ৩টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিটে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রূপপুর প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানান, প্রকল্পের প্রথম ইউনিটকে জ্বালানি লোড করার জন্য প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে। ইউনিট-১ এর মূল নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযোজনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ইউনিট-১ এ জ্বালানি লোড করার জন্য এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে 'ট্রেসেল ক্রেন' স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

প্রায় ২২৫ টন ওজনের ক্রেনটি রাশিয়ায় তৈরির পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় সংযোজন করা হয়েছে। এই ক্রেনটির উত্তোলন ক্ষমতা ৩৬০ টন। পারমাণবিক চুল্লিতে জ্বালানি লোডিং-রিলোডিংয়ের জন্য ক্রেনটি ব্যবহার করা হবে। এটি ইউনিট-১ এর অন্যতম ভারি যন্ত্রাংশ।

১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে স্থাপিত হয়েছে।

প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্টাক্টর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। প্রকল্পটিতে ২টি ইউনিট স্থাপিত হবে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। প্রতিটি ইউনিটে থাকছে ৩-প্লাস প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর।

আশা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হবে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Impact of esports on Bangladeshi society

From fringe hobby to national pride

For years, gaming in Bangladesh was seen as a waste of time -- often dismissed as a frivolous activity or a distraction from more “serious” pursuits. Traditional societal norms placed little value on gaming, perceiving it as an endeavour devoid of any real-world benefits.

15h ago