প্রিয়জনদের বিশেষ দিন মনে রাখা কেন জরুরি

বিশেষ দিনগুলো আমাদের জীবনের ভালো মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রিয় মানুষগুলো যদি সেই দিনটির কথা ভুলে বসে থাকেন তবে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।
প্রিয়জনদের বিশেষ দিন মনে রাখা কেন জরুরি
ছবি: সংগৃহীত

সোহা আর সাকিব অনেক দিন ধরেই প্রেমের সম্পর্কে। গত বছর সাকিব পাড়ি জমালেন ভিনদেশে, শুরু হলো দূরবর্তী সম্পর্ক। কঠিন এই সময়টার মধ্যেই সম্পর্কের পাঁচ বছর পূর্তি। সোহা মোটামুটি এক মাস আগে থেকে করে রেখেছেন অনেক পরিকল্পনা। অ্যানিভার্সারির দিন সেজেগুজে ভিডিও কল, দুজন দুটো কেক কাটা, আরও কত কী! অন্যদিকে সাকিব ভুলেই গেলেন দিনটির কথা। ফলাফল দুজনের মনোমালিন্য।

দোলা আর নাহিয়ান কর্মব্যস্ত দম্পতি। দোলার জন্মদিন আজ। রাত ১২টায় নাহিয়ান তাকে নিশ্চয়ই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন সেই আশা ছিল তার। কিন্তু নাহিয়ানের সেদিন অফিসে খুবই ব্যস্ততা গেছে। কালও আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এতকিছুর মধ্যে তিনি ভুলেই গেলেন স্ত্রীর জন্মদিনের কথা। বাড়ি ফিরেই ঘুমিয়ে গেলেন। দোলা আশাহত হলেন, ভীষণ মন খারাপ হলো তার। কারণ শত ব্যস্ততায়ও তিনি কখনো নাহিয়ানের জন্মদিন ভোলেন না।

বিশেষ দিনগুলো আমাদের জীবনের ভালো মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই প্রতি বছর জীবনের সেই উল্লেখযোগ্য মুহূর্তগুলোকে আমরা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আমরা চাই আমাদের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সেই দিনগুলো কাটাতে। তবে প্রিয় মানুষগুলো যদি সেই দিনটির কথা ভুলে বসে থাকেন তবে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। আবার, বিপরীত দিকে থাকা অর্থাৎ দিনটির কথা ভুলে যাওয়া মানুষটিরও থাকতে পারে নানা কারণ, নানা যুক্তি। সেক্ষেত্রে কি বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যেতেই পারে? এই দিনগুলো মনে রাখা কি আসলেই খুব জরুরি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আজ।

ভালোবাসা প্রকাশের রয়েছে নানা মাধ্যম। একেকজনের ভালোবাসা প্রকাশের ভাষা একেক রকম। কেউ খুব স্বতস্ফূর্তভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন, আবার কেউ নিজের আবেগ লুকিয়ে রাখেন। তবে যেকোনো সম্পর্ককে আপনি কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছেন তা বোঝাবার একটি মাধ্যম হতে পারে আপনার প্রিয়জনের পছন্দ-অপছন্দের দিকে খেয়াল রাখা বা তাদের বিশেষ দিনগুলোর কথা মনে রাখা। শুধু প্রেমের সম্পর্ক না। আপনার জীবনের অন্যান্য প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের বিশেষ দিন মনে রেখে তাদের জন্য কিছু করা যেতেই পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহি (২২) তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন এ বিষয়ে। মাহি এবং রাহা ছোটকাল থেকেই খুব ভালো বন্ধু। কর্মজীবনে দুজনে আলাদা হয়ে গেলে তাদের দেখা হয় খুব কম। কিন্তু নিজের জন্মদিনে মাহি আশা করেছিলেন রাহা তার ব্যস্ততার মধ্যেও বন্ধুর জন্য সময় বের করবেন। কিন্তু রাহা একেবারেই ভুলে গেলেন তার প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন। ফলে মাহির বন্ধুর ওপর অভিমান হলো খুব।

 

মাহি বলেন, 'বিশেষ দিন মানেই শুধু ভালোবাসার মানুষ, এটা কিন্তু ভুল ধারণা। ভাই-বোনের জন্মদিন, বাবা-মার বিবাহবার্ষিকী কিংবা বন্ধুদের জন্মদিনও কিন্তু বিশেষ দিন। এই মানুষগুলো আপনাদের অনেক কাছের ভাবে, তারাও আশা করে আপনারা তাদের এই বিশেষ দিনের সঙ্গী হবেন। সেটা মাথায় রাখা উচিত।'

আজকাল প্রযুক্তির প্রসার আর কর্মব্যস্ততায় আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। তাহলে এরকম বিশেষ দিন ভুলে যাওয়াকে অপর পক্ষের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা উচিত কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাইশা বলেন, 'আমার প্রেমিক যদি রিয়াল মাদ্রিদে দশ বছর আগে এই দিনে কে খেলেছিল, কে গোল দিয়েছিল সব মনে রাখতে পারে, অন্তত জন্মদিনটা, অ্যানিভার্সারিটা তো মনে রাখতেই পারে। মনে না থাকলে ফোনে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখা যায়, এখন তো ফেসবুক মেমোরিতেও আসতেই থাকে। বিশেষ দিনে কে কী করবে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু দিনটাই মনে না রাখার পেছনে কোনো যুক্তি  খুঁজে পাই না আমি।'

কথাটি কিন্তু ভুল নয়। ছোট ছোট কত বিষয়ই আমরা মনে রাখি। সেখানে প্রিয়জনরা যে বিশেষ দিনগুলো মনে রাখার প্রত্যাশা করেন, সেগুলো একটু মনে রাখার চেষ্টা কিন্তু করা উচিত। আপনার হয়তো মনে হয়, প্রিয়জনরা তো আছেনই সবসময়। তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে বিশেষ দিন কেন লাগবে, তাহলে আপনি ভুল। বিশেষ দিন নিয়ে আপনার আবেগ না-ই থাকতে পারে। কিন্তু ‍প্রিয়জনের প্রত্যাশা পূরণ করতে, তাদের হাসিমুখ দেখতে এটুকু কাজ করতেই পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাফিদ রহমান বলেন, 'আমরা নিজেকে নিয়ে বেশি ভাবি। আমরা যেটা পছন্দ করি, আশা করি যে আমাদের প্রিয়জনদেরও সেটাই ভালো লাগবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো পছন্দ, লাইফস্টাইল সবই আলাদা হতেই পারে এবং সেটাকে দুজনেরই সম্মান করা উচিত। আমার হয়তো জীবনের বিশেষ দিনগুলো বড় করে উদযাপন করতে ভালো লাগে না। কিন্তু আমার সঙ্গীর যদি ভালো লাগে, আমার সেটাকে অবশ্যই সম্মান করা উচিত।'

যদি আপনার এরকম বিশেষ দিন ভুলে যাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে প্রয়োজনে মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখা যেতে পারে। ভালো হয় কয়েকদিন আগেই রিমাইন্ডার দিয়ে রাখলে। তাতে দিনটি উদযাপনের পরিকল্পনা আগেভাগেই করে ফেলতে পারবেন।

দিনটি কীভাবে উদযাপন করবেন তা নির্ভর করবে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনের ওপর। আপনার প্রিয় মানুষটির জন্মদিনে তাকে সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিতে পারেন। তবে তিনি যদি খুব ঘটা করে জন্মদিন পালন করতে পছন্দ না করেন তাহলে নিজেরাই ঘরোয়া আয়োজনে দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে পারেন। বিশেষ দিনগুলোতে একসঙ্গে পুরোনো কোনো স্মৃতির কাছে ফিরে যেতে পারেন। যেমন বিবাহবার্ষিকীতে আপনাদের প্রথম দেখা হওয়ার জায়গায় যেতে পারেন। এরকম মুহূর্তগুলো আপনার সঙ্গীর প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করবে, তিনি নিজেকে বিশেষ মনে করবেন আরও।

বন্ধু বা পরিবারের অন্য কারো বিশেষ দিনটিতেও তাকে কিছু উপহার দিতে পারেন, একসঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। সেটা সম্ভব না হলে অন্তত দিনটিতে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মনে করিয়ে দিতে পারেন, তারা আপনার জন্য বিশেষ মানুষ।

দিনটি যেভাবেই দিনটি উদযাপন করেন না কেন, পছন্দ বুঝে ছোট ছোট জিনিসের দিকে লক্ষ্য রেখে দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে পারেন। এই ছোট ছোট প্রচেষ্টাগুলোই সম্পর্কের বন্ধনকে আরও মজবুত করে তুলবে। তাই বিশেষ দিনটিকে ভুলবেন না, দিনটি বিশেষ হওয়ার বদলে যেন উল্টো প্রিয়জনদের সঙ্গে মান-অভিমান বা দূরত্ব সৃষ্টির কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Sea-level rise in Bangladesh: Faster than global average

Bangladesh is experiencing a faster sea-level rise than the global average of 3.42mm a year, which will impact food production and livelihoods even more than previously thought, government studies have found.

9h ago