প্রথা ভেঙে সূর্যাস্তের পর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করবে মিয়ানমারের সেনারা

জান্তা সরকার জানিয়েছে, প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি জলবায়ুর ধরন ‘এল নিনোর’ কারণে এই অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যার পর আয়োজন করা হয়েছে।
২০২৩ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্যারেড। ফাইল ছবি: এএফপি
২০২৩ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্যারেড। ফাইল ছবি: এএফপি

আজ বুধবার মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস। তবে প্রতি বছরের মতো দিনের আলোয় নয়, বরং সূর্যাস্তের পর এই দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

গত ছয় দশক এই দিবসটিকে ঘিরে আয়োজিত কুচকাওয়াজ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান সকালে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

তবে ৬০ বছর আগে পিপলস ফ্রিডম লিগ সরকার ও জেনারেল নে উইনের বিপ্লবী কাউন্সিলের আওতাধীন সরকারের আমলে দিন ও রাত, উভয় সময়ই এটি পালিত হয়েছে।

জান্তা সরকার জানিয়েছে, প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি জলবায়ুর ধরন 'এল নিনোর' কারণে এই অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যার পর আয়োজন করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, এ সময় বিমানবাহিনীর বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছরের অনুষ্ঠান স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হতে যাচ্ছে। জান্তা সরকারের সমালোচকরা বলছেন, প্রথাগত 'ইয়াদায়া' আচারের সঙ্গে মিল রেখে এ সময়টি বেছে নেওয়া হয়েছে। সোয়া পাঁচটার তিন একক ৫, ১ ও ৫ এর যোগফল ১১—যার অর্থ, এই আচারের মাধ্যমে 'সেত তা মি' বা ১১ বিপদ থেকে সেনাবাহিনী রক্ষা পাবে।

সমালোচকরা বলছেন, একই কারণে সূর্যাস্তের পর এ অনুষ্ঠান আয়োজন করছে সেনাবাহিনী—যাতে 'তাদের মাথার ওপর সূর্যাস্ত' না হয়।

এবারের প্যারেডটি অন্যান্য বছরের চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী। গত বছর মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীদের কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূখণ্ডের দখল হারিয়েছে সরকার। এরকম পরিস্থিতিতে এবং বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা চালুর পর এটাই প্রথম সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন।

এক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ঠাট্টার ছলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, 'আমরা (এই কুচকাওয়াজে) মিয়ানমারের অলংকারিক আধুনিক অস্ত্রের প্রদর্শনী দেখব।'

২০২৩ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। ফাইল ছবি: এএফপি
২০২৩ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্যারেডে অংশ নিচ্ছেন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। ফাইল ছবি: এএফপি

সশস্ত্র বিদ্রোহ দমন করা তো দূরে থাক, সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং এর সরকার কাচিন, কারেন্নি (কায়াহ), চিন, রাখাইন ও শান রাজ্যে একাধিক শহর ও সামরিক ঘাঁটির দখল হারিয়েছে। এছাড়া, সাগাইং ও মাগওয়ে রাজ্যেও ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সরকার।

মিন অং হ্লাইং বেশ কয়েকবার দাবি করেছেন, জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীদের কাছে তুলনামূলকভাবে উন্নত প্রযুক্তি ও অস্ত্র রয়েছে। তিনি দাবি করেন, বিদ্রোহীরা উত্তরের শান রাজ্যে উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করে জান্তার ওপর বোমাবর্ষণ করেছে।

তার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর ধারাবাহিক ব্যর্থতায় এমন কী জান্তা সরকারের সমর্থকরাও সেনাবাহিনী প্রধানের পদ থেকে মিন অং হ্লাইং এর পদত্যাগের দাবি করেছেন।

Comments