শি-বাইডেন বৈঠকে প্রাধান্য পেল যে ৫ বিষয়

দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে পাঁচটি মূল বিষয়
প্রায় এক বছর পর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
প্রায় এক বছর পর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

প্রায় এক বছর পর মুখোমুখি বৈঠক করলেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রেসিডেন্ট। গতকাল বুধবার জো বাইডেন ও শি জিনপিং প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন। এই আলোচনায় উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক বিষয়।

আজ বৃহস্পতিবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানা গেছে।

দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে পাঁচটি মূল বিষয়

১। সামরিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের যোগাযোগ রক্ষা

শি ও বাইডেন প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন। ছবি: রয়টার্স
শি ও বাইডেন প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন। ছবি: রয়টার্স

২০২২ এর আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রেপ্রেজেন্টেটিভস এর  তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে গেলে চীন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ ছিন্ন করে। এবারের বৈঠকে দুই নেতা আবারও এই যোগাযোগ স্থাপনের অঙ্গীকার করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই এই বৈঠকের সবচেয়ে বড় অর্জন।

পেন্টাগনের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, বেইজিং এর সঙ্গে সামরিক পর্যায়ে একাধিকবার যোগাযোগ ও বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তারা 'অস্বীকার, বাতিল ও অবজ্ঞা' করছে।

সামরিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পেন্টাগন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট একইসঙ্গে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বাইডেন জানান, তিনি চাইলেই যেকোনো সময় ফোন হাতে নিয়ে শি কে ফোন করতে পারবেন এবং তিনি সেই কল রিসিভ করবেন। শি তাকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করবেন।

'আমরা এ বিষয়টিতে একমত হয়েছি', যোগ করেন বাইডেন।

বৈঠকের পর শি বলেন, '১২ বছর আগে থেকেই (আমার আর বাইডেনের) যোগাযোগ চলছে। আমার এখনো সেসব আলোচনা খুব ভালো করেই মনে আছে। আমি প্রায়ই এগুলো নিয়ে চিন্তা করি'।

শি ও বাইডেনের যোগাযোগ শুরু হয় এক যুগ আগে, যখন দুইজন নিজ নিজ দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন।

২। তাইওয়ান

শি ও বাইডেন প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন। ছবি: রয়টার্স
শি ও বাইডেন প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন। ছবি: রয়টার্স

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দুই নেতার বৈঠকে তাইওয়ান ছিল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়।

এ বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বাইডেনের সঙ্গে শি'র তাইওয়ান বিষয়ে 'ঠাণ্ডা মেজাজের' আলোচনা হয়েছে এবং পরিস্থিতি একবারও 'উত্তপ্ত' হয়ে ওঠেন।

বাইডেন তাইওয়ানের আশেপাশে চীনের বড় আকারের সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে নিয়ে নিন্দা জানান। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের আত্মরক্ষায় সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত রাখবে।

শি দাবি করেন, স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ান চীনের অংশ।

এ পর্যায়ে শি বাইডেনকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাইওয়ানকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করে চীন-তাইওয়ান একীভূতকরণের শান্তিপূর্ণ উদ্যোগে সমর্থন জানানো।'

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে। শি'র বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয় আরও জানায়, 'চীন একীভূতকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। একে থামানোর কোনো উপায় নেই।'

বুধবারের বৈঠকে বাইডেন, চীনকে অনুরোধ করেন তাইওয়ানের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান জানাতে। আগামী জানুয়ারিতে তাইওয়ানে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যেখানে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাইওয়ানের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই।

৩। অর্থনীতি

বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালেন শি। ছবি: রয়টার্স
বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালেন শি। ছবি: রয়টার্স

এই বৈঠকে শি জিনপিংয়ের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল অর্থনীতি।

তিনি বলেন, 'কোভিড থেকে সারা বিশ্ব বের হয়ে আসতে পেরেছে, কিন্তু এখনো এর প্রভাব কার্যকর রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু এর গতি অত্যন্ত ধীর।'

তিনি মার্কিন-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ককে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হিসেবে অভিহিত করেন।

শি বলেন, তার ও বাইডেনের 'ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব' এবং তারা একজন আরেকজন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না।

করোনাভাইরাস মহামারিতে চীনের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা থেকে তারা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সঙ্গে যোগ হয় ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ও বর্ষীয়ান জনসংখ্যা। তবে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানির ওপর আরোপিত অসংখ্য বিধিনিষেধের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে।

শি জিনপিং বলেন, 'প্রযুক্তি খাতে চীনের উন্নতিকে রুদ্ধ করার প্রচেষ্টা প্রকারান্তরে চীনের মানুষকে তাদের জীবনের গুণগত মান বাড়ানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।'

'বাইরের শক্তি চীনের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গতি রুদ্ধ করতে পারবে না, যা চীনের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে', যোগ করেন শি।

দুই নেতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতের উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করেন।

শি ও বাইডেন এআই'র ক্রমবর্ধমান বিপদ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে এখুনি কোনো চুক্তি বা যৌথ ঘোষণার বিষয়ে একমত হননি তারা। 

৪। ফেনটানিল

সর্বশেষ ২০২২ এ বালিতে দেখা করেন দুই নেতা। ফাইল ছবি:রয়টার্স
সর্বশেষ ২০২২ এ বালিতে দেখা করেন দুই নেতা। ফাইল ছবি:রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিকারক মাদক হিসেবে ফেনটানিল দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা দেশটির জন্য একটি বড় সমস্যা।

অবৈধ ফেনটানিল মাদক তৈরিতে যেসব কাঁচামাল ও রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহার হয়, সেগুলো যাতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে না আসে, সে বিষয়টির দেখভাল করার অঙ্গীকার করেন শি।

বাইডেন বলেন, 'এতে মানুষের জীবন বাঁচবে এবং আমি এ বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট শি'র অঙ্গীকারের প্রতি সাধুবাদ জানাই।'

৫। মধ্যপ্রাচ্য

গাজায় কামানের গোলা ছুড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স
গাজায় কামানের গোলা ছুড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স

গাজার চলমান পরিস্থিতি ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আরও নিরাপত্তা করিডর চালু ও মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়া নিয়ে কথা বলেন দুই নেতা।

সশস্ত্র ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। যদিও শুরুতে এ সংখ্যা এক হাজার ৪০০ দাবি করেছিল দেশটি। ২০০ ব্যক্তিকে জিম্মি করে হামাস (শুরুতে সংখ্যাটি ২৪০ বলা হয়েছিল)।

হামাসের হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। কিছুদিন পর এতে যোগ দেয় স্থলবাহিনী। প্রায় ৪০ দিন ধরে চলমান হামলায় গাজায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে, এই আশংকায় বাইডেন, শিকে অনুরোধ করেন ইরানের সঙ্গে আলোচনা করতে এবং তাদেরকে কোনো ধরনের উসকানিমূলক আচরণ থেকে বিরত রাখতে।

ইরান হামাসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচিত।

Comments

The Daily Star  | English

Tk 127 crore owed to customers: DNCRP forms body to facilitate refunds

The Directorate of National Consumers' Right Protection (DNCRP) has formed a committee to facilitate the return of Tk 127 crore owed to the customers that remains stuck in the payment gateways of certain e-commerce companies..AHM Shafiquzzaman, director general of the DNCRP, shared this in

22m ago