চকবাজার জেল: ধ্বংসাবশেষের নিচে পুরোনো ঢাকার ইতিহাস

ঢাকার চকবাজারে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে সুলতানি আমলের একটি প্রাচীন ভবনের ভগ্নাবশেষ পাওয়া যায় প্রায় বছর চারেক আগে। ভবনের একপাশের দেয়ালসহ এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খনন ও সংরক্ষণের জন্য ২০১৬ সালে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। খননে প্রাচীন আমলের আরও কিছু নিদর্শনের খোঁজ মিলেছে বলে জানা যায়।
ছবি: রাশেদ সুমন

ঢাকার চকবাজারে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে সুলতানি আমলের একটি প্রাচীন ভবনের ভগ্নাবশেষ পাওয়া যায় প্রায় বছর চারেক আগে। ভবনের একপাশের দেয়ালসহ এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খনন ও সংরক্ষণের জন্য ২০১৬ সালে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। খননে প্রাচীন আমলের আরও কিছু নিদর্শনের খোঁজ মিলেছে বলে জানা যায়।

তবে, খননে প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদের তালিকা প্রকাশ নিয়ে জটিলতায় গত দুই বছর ধরে বন্ধ কারাগার এলাকার প্রাচীন ইতিহাস অনুসন্ধান ও গবেষণার কাজ।

 

সরকারের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, একাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানকে বার বার বলার পরও তিনি খননের প্রতিবেদন জমা দিচ্ছেন না। অন্যদিকে সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, টেকনিক্যাল কমিটির অসহযোগিতা এবং তহবিল না দেওয়ায় তিনি প্রতিবেদন তৈরি করতে পারছেন না।

সুফি মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, কারাগার চত্বরে চারটি জায়গায় ২০১৭-১৮ সালে তিন মাস প্রকল্পের অর্থায়নে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ করা হয়েছে। আবিষ্কৃত প্রত্নসম্পদের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশাল আবিষ্কার ছিল। কিন্তু আমাকে প্রকাশ করতে দিল না। টেকনিক্যাল কমিটি আমাকে কথা বলতে মানা করে দিয়েছে। কথা বলতে দিচ্ছে না। কাজও করতে দিচ্ছে না।’

তার এই দাবির প্রসঙ্গে, কমিটির অন্যতম সদস্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘খনন কাজের পর কমিটিকে প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদের তালিকা বা রিপোর্ট না দিয়ে বিষয়ে একটি ব্রশিওর প্রকাশ করেন এবং কমিটিকে না জানিয়েই একটি সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করেছিলেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। তখন তাকে যতটুকু কাজ হয়েছে সেটুকুর রিপোর্ট কমিটির কাছে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, গত দুবছর বার বার বলা সত্ত্বেও তিনি রিপোর্ট দেননি।’

তবে সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, একবার খননের ভিত্তিতে রিপোর্ট দেয়া যাবে না। সেজন্য আরও খনন করতে হবে। আরও তহবিল দরকার। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন দিতে হলে খননে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর বিশ্লেষণ করা দরকার। এর জন্যও অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু বার বার বলার পরও আমাকে আর কোনো তহবিল দেওয়া হচ্ছে না।’

সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে জমা দেয়ার জন্য ব্রশিওর করা হয়েছিল বলেও এসময় জানান তিনি। তবে সংবাদ সম্মেলনের উদ্যোগ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

চকবাজারের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, রিপোর্ট প্রদান ও প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদের তালিকা প্রকাশের কাজে স্বচ্ছতা থাকা দরকার ছিল। কিন্তু এখানে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে মত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজের। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে ধারণা করা যায়, হাজার বছর আগে বুড়িগঙ্গা নদী তীরবর্তী ঢাকায় পূর্ব পশ্চিমে নগরায়ণ হয়েছিল।  ঢাকার হাজারীবাগ, লালবাগ, চকবাজার, ইসলামপুর, ফরাসগঞ্জ, আলমগঞ্জ, পোস্তাগোলা এসব অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হলে হাজার বছরের প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে। চকবাজারের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে পাল-সেন যুগের বিভিন্ন নিদর্শন থাকার কথা।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজের রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়া বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মমিনুর রহমান মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটি অমীমাংসিত সমস্যা। সমাধান করার চেষ্টা হচ্ছে। 

ছবি: রাশেদ সুমন

চকবাজার এলাকায় প্রাচীন বেশ কিছু নিদর্শন এর আগেও আবিষ্কার হয়েছে। এর মধ্যে ১৯০৬ সালে সংস্কারের জন্য চকবাজারের চুড়িহাট্টা মসজিদের আঙিনা খননের সময় বাসুদেবের একটি মূর্তি পাওয়া যায়। ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি ২০১১ সালে চকবাজারের সারঙ্গধর জিউ আখড়ায় সন্ধান পায় পাথরের প্রাচীন নট্টেশ্বর মূর্তির, যা নিয়ে ডেইলি স্টারে ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চকবাজারে সুলতানি আমলের এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন উর্দু রোড মসজিদের সংস্কার ও তোরণ নির্মাণের শিলালিপি। কারাগার চত্বরের দক্ষিণ অংশে পশ্চিম দিকে উর্দু রোডে মসজিদটির অবস্থান। উনিশ শতকের শেষার্ধে আমলা ও গবেষক জেমস ওয়াইজ উর্দু মসজিদের সংস্কারের শিলালিপি আবিষ্কার করেন—যা বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। উর্দু রোড মসজিদের সংস্কার ও তোরণ নির্মাণ ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হওয়ার কথা শিলালিপিতে উল্লেখ থাকলেও কে-কবে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য শিলালিপিতে নেই। তবে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর ও উত্তরকাল: ১ম খণ্ড সমাজ, সংস্কৃতি প্রশাসন’ শীর্ষক গ্রন্থে ‘প্রাক মুঘল ঢাকা: লিপিতাত্ত্বিক সাক্ষ্য’ শীর্ষক প্রবন্ধে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক হাবিবা খাতুন মত প্রকাশ করেন, বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ (১৩৩৮) মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রবন্ধে অধ্যাপক হাবিবা খাতুন আরও উল্লেখ করেন, সুলতানি আমলে পনের শতকের শেষ নাগাদ ঢাকা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করে।

ঢাকা বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সুলতানি, মুঘল ও নবাবি আমলে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে চকবাজার অঞ্চল ছিল ঢাকার প্রধান কেন্দ্র। সুলতানি আমলে এখানে দুর্গ এবং বিচারালয় ছিল বলে হাকিম হাবিবুর রহমানের ‘আসুদগানে ঢাকা’সহ ইতিহাস বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। সুলতানি থেকে নবাবি আমল পর্যন্ত চকবাজার দুর্গে ছিল প্রাদেশিক প্রধানের প্রাসাদ, টাকশাল, বিচারালয় ও সচিবালয়।

কোম্পানি আমল শুরু হলে অঞ্চলটির সামরিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব হ্রাস পায়। ঢাকার তৎকালীন প্রশাসনিক প্রধান নায়েবে নাজিমকে চকবাজার দুর্গ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার জন্য নীমতলীতে নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। টাকশাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রশাসনিক ও বিচারিক কর্মকাণ্ড চকবাজার দুর্গ থেকে সদরঘাট এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। এরপর চকবাজার দুর্গকে পাগলা গারদ ও কারাগারে পরিণত করা হয়। পাগলা গারদটি অবশ্য কিছুদিন পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চকবাজারের দুর্গটি কোম্পানি আমল থেকে ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ৪৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার হয় কারাগার হিসেবে। সুলতানি, মুঘল ও নবাবি আমলের পূর্ববঙ্গের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর কেন্দ্র যেমন ছিল চকবাজার দুর্গ, তেমনি কোম্পানি আমল থেকে বাংলাদেশ পর্ব পর্যন্ত চকবাজারের এই কারাগারটি বহন করছে জাতীয় গৌরবের-শোকের মহান ঐতিহ্যের নিদর্শন। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারীদের স্মৃতিধন্য চকবাজারের সাবেক কারাগার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাজীবন ছিল কর্মমুখর। চকবাজারের জেলখানায় থাকার সময়ই তিনি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সহ অন্যান্য লেখা লিখেছিলেন। এই জেলখানায় শহীদ হন জাতীয় চার নেতা। কোম্পানি আমলে চকবাজার দুর্গে প্রতিষ্ঠিত কারাগারে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বন্দীরা বসবাস করেছেন। সে বছর জুলাইয়ে বন্দীদের নবনির্মিত কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

সিদ্ধান্ত হয় কারাগার এলাকাকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, স্থপতি ও ইতিহাসবিদদের সমন্বয়ে ২০১৬ সালে গঠন করা হয় টেকনিক্যাল কমিটি। কারাগারকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরের কাজ চলছে এই কমিটির তত্ত্বাবধানে।

পুরনো কারাগারের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে একটি উন্মুক্ত নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে ‘ফর্ম থ্রি আর্কিটেক্টস’ এর নকশা সেরা নির্বাচিত হয়।

পুরনো কারাগারের জায়গা আছে প্রায় ৩৮ একর। এর মধ্যে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠবে দক্ষিণ দিকের প্রায় ২৫ একর জায়গার ওপর। উত্তর দিকটা থাকবে কারা অধিদপ্তরের অধীনে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কমপ্লেক্সের স্থানটিকে নকশায় তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর দিকের ‘এ জোন’ ও দক্ষিণ দিকের ‘বি জোনে’ কিছু নতুন স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। মধ্যবর্তী ‘সি জোনে’ নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না। এখানে কারাগারের বিভিন্ন পুরাতন ভবনে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় চার নেতা জাদুঘর, কারা জাদুঘর, ফিল দ্য জেল, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কারাগারের ভেতর ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৩৬টি স্থাপনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ভাঙা পড়বে কম গুরুত্বপূর্ণ ৯৫টি স্থাপনা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কারাগার চত্বরের সুলতানি আমলের দেয়ালটি সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছিল। টেকনিক্যাল কমিটিও বিষয়টি অনুমোদন করেছে। কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে পুকুর আছে দুইটি। সুলতানি আমলের দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে কারাগার চত্বরের দক্ষিণ দিকের পুকুরের পশ্চিম দিকে দুই নম্বর ফাঁসির মঞ্চের পাশে। এটি একটি প্রাচীন ভবনের ভগ্নাবশেষ। ভবনটির ছাদ ও দুদিকের দেয়াল ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে ভবনটির দুদিকের দেয়ালের অস্তিত্ব এখনো আছে।  টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, কারাগার চত্বরে কোন ভবন রাখা হবে, আর কোন ভবন ভেঙে ফেলা হবে, কনসালটেন্টদের সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনসহ কমিটির সকল সদস্য কারাগার চত্বরে প্রতিটি ভবন পরিদর্শন করেছিলাম। কনসালটেন্টরা কারাগারের ভেতরের পুকুরের পশ্চিমপাড়ে একটি ভবন দেয়ালসহ সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছিলেন। ভবন পরিদর্শনের সময় আমরা সেখানে গিয়ে দেয়ালটি দেখি। দেয়ালটি আগে আমার দেখা ছিল না। দেয়ালের চিকন ইট দেখেই আমরা বুঝতে পারি, সুলতানি আমলের দেয়াল—মুঘল আমলে এই ইট দেখা যায় না।

দেয়ালটি যে সুলতানি আমলেরই তার নিশ্চয়তার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল বাংলার সুলতানি স্থাপত্য নিয়ে জার্মানিতে ডক্টরেট করা অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমদকে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আহমদ বলেন, যথার্থ সময়কাল নির্ধারণ করা যায় কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু ইটের কার্বন ডেটিং হয় না। কার্বন ডেটিং হয় ধাতুর। তবে দেয়ালের নির্মাণ শৈলি ও ইট দেখে সময়কাল বলা সম্ভব। ইট বলতে হয় বন্ডিং দেখে, মর্টার দেখে। সুনির্দিষ্ট না হলেও দেয়ালের নির্মাণ থেকে আনুমানিক সময়কাল বলা যায়।

সুলতানি আমলের বলে শনাক্ত করা প্রাচীন দেয়ালটি বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চকবাজারে পাঠান আমলের দুর্গের কথা পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে। সাবেক জেলখানায় প্রাচীন দেয়ালটি হয়তো বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লিখিত সেই পাঠান যুগের দুর্গের নিদর্শন।

টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, টেকনিক্যাল কমিটির সভায় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন কারাগার চত্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নাম প্রস্তাব করলে তা গৃহীত হয়েছিল। ডিজাইনের জন্য গাইড লাইন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক খননের জন্য চারটি জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। ডিজাইনের গাইডলাইনে বলা হয়েছিল, কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অংশ ছাড়া এখানে বেশিরভাগ জায়গায় নতুন করে কিছু নির্মাণ করা যাবে না।

অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমদ এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, চকবাজার কারাগার চত্বরে খননের মাধ্যমে অনেক প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। মাঝের দিকটায় নির্মাণকাজ হলে প্রাচীন নিদর্শনের ক্ষতি হতে পারে। এটা বিবেচনা করেই এই দিকটায় কোনো নির্মাণকাজ না চালানোর সুপারিশ করা হয়।

চকবাজারের পুরনো কারাগার চত্বরে খনন সম্পর্কে মুনতাসীর মামুন বলেন, সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার প্রতিষ্ঠার আগে দীর্ঘকাল এখানে দুর্গ ছিল। ছিল সুবেদার, নাযিম ও নায়েবে নাযিমদের প্রাসাদ, টাকশাল। প্রশাসন ও বিচার কাজেরও কেন্দ্র ছিল এখানে। তাই টেকনিক্যাল কমিটির সভায় কারাগার চত্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের বিষয়ে আমি গুরুত্ব দিতে বলেছিলাম। কোনো প্রত্ন সম্পদ পাওয়া গেলে কারাগারের জাদুঘরে প্রদর্শনের ব্যবস্থার কথাও বলেছিলাম। কমিটি গ্রহণ করেছিল বিষয়টি। সেই অনুযায়ী উদ্যোগও নেয় কমিটি। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খননের রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে এই এলাকার প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য অনুসন্ধান ও গবেষণা কাজ স্থগিত হয়ে আছে। খননের রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ চকবাজারের পুরনো কারাগার চত্বরে পাওয়া যেতে পারে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনাবিষ্কৃত উপাদান।

 

আরও পড়ুন:

সিলেট শহরের প্রাচীন ভাস্কর্য

সিলেটে বিষ্ণু ও ধ্যানীবুদ্ধের ভাস্কর্যের সন্ধান

বিনোদন কেন্দ্র বাকল্যান্ড বাঁধ পরিণত হয়েছে ব্যবসা কেন্দ্রে

Comments

The Daily Star  | English

Wage growth still below inflation

Unskilled workers wage grew 8.01% in September this year when inflation was 9.92%

3h ago