দেশে বাড়ছে ক্যানসার রোগী, ২০৫০ সালে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা

২০৫০ সালে সারা বিশ্বে ক্যানসারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা ২০২২ সালের সংখ্যার তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ২০৫০ সালে দেশে ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ১৮৫টি দেশ এবং ৩৬ ধরনের ক্যানসারের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে, খাদ্যনালী, ঠোঁট, ওরাল ক্যাভিটি এবং ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সাবেক সভাপতি মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভেজাল খাবার ও জাংক ফুডের ব্যবহার, অলস জীবনযাপন, দূষণ এবং তামাক ও অ্যালকোহল ব্যবহার বাংলাদেশে ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ। হাইপার অ্যাসিডিটি পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যেই সাধারণ। এ কারণেই খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঘটনা বাড়ছে।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেরিতে ক্যানসার শনাক্ত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। ডব্লিউএইচও আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৫০ সালে সারা বিশ্বে ক্যানসারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যা ২০২২ সালের সংখ্যার তুলনায় প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি।ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) একটি সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটি বলছে, প্রায় পাঁচজনের মধ্যে একজন তাদের জীবদ্দশায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া প্রতি নয়জন পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১২ জন নারীর মধ্যে একজন ক্যানসারে মারা যায়।  

গবেষণায় তামাক, অ্যালকোহল, স্থূলতা এবং বায়ু দূষণকে বিশ্বব্যাপী ক্যানসার রোগীর বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

দেশের চিকিৎসকরা বলছেন, পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রকোপ বেশি এবং নারীদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুর ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আগামীকাল বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালন করা হবে। তবে বাংলাদেশে এই রোগের কোনো জাতীয় তথ্য নেই।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এম নিজামুল হক বলেন, 'দেশে ক্যানসারের পুরো চিত্র পেতে আমাদের শিগগিরই এ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করতে হবে। আমাদের কাছে হাসপাতাল-ভিত্তিক কিছু তথ্য আছে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ নয়।' 

প্রখ্যাত ক্যানসার এপিডেমিওলজিস্ট হাবিবুল্লাহ রাসকিন বলেন, 'রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা যে বাড়ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সঠিক তথ্য ছাড়া এর পরিমাণ বলা কঠিন।'

একটি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল থাকতে হবে যার অধীনে কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচির বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সঠিকভাবে ক্যানসার শনাক্ত করা এবং স্ক্রিনিং সিস্টেম ও চিকিত্সা প্রোটোকল অবশ্যই থাকতে হবে। এখনই আমাদের সব ক্যানসার প্রোগ্রামকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার উপযুক্ত সময়, যাতে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য থাকতে পারে।'

সরকার গত বছর সার্ভিকাল ক্যানসারজনিত মৃত্যু দূর করার জন্য স্কুল-স্তরের এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস) টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'হেপাটাইটিস বি এবং অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলোও ক্যানসারজনিত মৃত্যু কমায়।'

ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে আনুমানিক ৯.৭ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারে মারা গেছে। ডব্লিউএইচও ১১৫টি দেশের সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা গেছে বেশিরভাগ দেশ সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের অংশ হিসেবে ক্যানসার এবং এর পরিষেবাকে পর্যাপ্তভাবে অর্থায়ন করে না। আইএআরসি এর গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরির নতুন তথ্যে দেখা গেছে যে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী যারা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ১০ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

নতুনভাবে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বব্যাপী ২.৫ মিলিয়ন, যা সবচেয়ে বেশি। এরপরে ২.৩ মিলিয়ন স্তন ক্যানসার, ১.৯ মিলিয়ন কোলোরেক্টাল ক্যানসার, ১.৫ মিলিয়ন প্রোস্টেট এবং ৯ লাখ ৭০ হাজার মানুষ পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। 

এছাড়া 

ফুসফুসের ক্যানসারে ১.৮ মিলিয়ন, কোলোরেক্টাল ক্যানসারে ৯ লাখ, লিভার ক্যানসারে ৭ লাখ ৬০ হাজার, স্তন ক্যানসারে ৬ লাখ ৭০ হাজার এবং পাকস্থলীর ক্যানসারে ৬ লাখ ৬০ হাজার জন মারা গেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

For now, battery-run rickshaws to keep plying on Dhaka roads: Quader

Road, Transport and Bridges Minister Obaidul Quader today said the battery-run rickshaws and easy bikes will ply on the Dhaka city roads

1h ago