বাংলাদেশের সহজ জয়ে প্রথম পরীক্ষায় উৎরে গেলেন সাইফুদ্দিন-তানজিদ
জিম্বাবুয়ে সিরিজ মূলত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড চূড়ান্তের এক রকম মহড়া। যে কয়েকটি জায়গা খতিয়ে দেখার মতন তার দুটিতে খুব আদর্শ পথে না হলেও নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
শুক্রবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সফরকারী জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে লড়াই জমাতে পারেনি। প্রত্যাশা অনুযায়ী নাজমুল হোসেন শান্তর দল জিতেছে ৮ উইকেট। আগে ব্যাটিং পেয়ে তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে স্রেফ ১২৪ রান জড়ো করে তারা, ২৮ বল আগেই তা পেরিয়ে যায় স্বাগতিক দল।
জিম্বাবুয়েকে অল্প রানে আটকে রাখতে ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ। তবে বিশ্বকাপ দলে তার থাকা নিয়ে তো সংশয় নেই। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন কেমন করেন দেখার ছিলো। ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে তিনিও কেড়েছেন আলো।
১২৫ রান তাড়ায় ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের হিরো ওপেনার তানজিদ। তিনবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৪৭ বলে ৬৭ রানে। মেরেছেন ৮ চার আর দুই ছক্কা। তার সঙ্গে ৩৬ বলে ৬৯ রানের জুটিতে ১৮ বলে ৩৩ করেন তাওহিদ হৃদয়।
তানজিদ জীবন পান ৩ ও ৪ রানে। ফিফটিপর পান আরেক জীবন। তবে সেসব তো খেলারই অংশ। জীবনটা কাজে লাগানোর ব্যাপারও ছিলো। ভাগ্যকে পক্ষে পেয়ে পুরোপুরি সুবিধাও তুলেছেন তিনি।
বিশ্বকাপে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে তিনি এখন অনেকটাই এগিয়ে। তিনবার জীবন পাওয়ার মুহূর্তগুলো ছাড়া এমনিতে তানজিদ খেলেছেন দারুণ, সময়ের দাবি মিটিয়ে আগ্রাসী হয়ে টেনেছেন ইনিংস। পুল শটে তার মারা ছক্কাগুলো ছিলো দেখার মতন।
সাইফুদ্দিন তার প্রথম উইকেট পান বাজে বলে। ব্যাটারের অনেকটা উপহার দেওয়া, বাকি দুই উইকেটে তারই কৃতিত্ব দিতে হয়। এমনিতে চাপে পড়া জিম্বাবুয়েকে চেপে রাখতে কোন ভুল করেননি তিনি। ডেথ ওভারে নিজের দক্ষতার ঝলকও দেখান কিছুটা।
দুই দফায় বৃষ্টি বাগড়ার ম্যাচে খুব উত্তাপ ছিলো না। জিম্বাবুয়ে অল্প রান করার পরই দৃশ্যপট অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। যদিও সহজ রান তাড়ায় নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেরা ছন্দে না থাকা লিটন দাস ব্লেসিং মুজারাবানির ভেতরে ঢোকা বলে হয়ে যান বোল্ড।
তিন ওভার পর বৃষ্টিতে বেশ কিছুটা সময় বন্ধ থাকে খেলা। ফের খেলা শুরু হতেই দুবার জীবন পান তানজিদ। মুজারাবানির একই ওভারে ৩ ও ৪ রানে তার ক্যাচ ফসকে যায়। প্রথমে পুল করতে গিয়ে সোজা উঠিয়েছিলেন, বোলার না কিপার কে ধরবেন দ্বিধায় হাতছাড়া হয়ে যায় তা। ওই ওভারের শেষ বলে এক্সটা কাভারে আরেকটি ক্যাচ পড়ে যায়।
দুই জীবন পেয়েই এই তরুণ দুই ছক্কায় মুজারাবানিকে উড়ান গ্যালারিতে। ৭.২ ওভারের পর আবার নামে বৃষ্টি। আরেক দফা খেলা বন্ধের পরও ওভার কাটা যায়নি। তবে কাটা পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। থিতু হয়ে ইনিংস টানতে পারেননি তিনি। লুক জঙ্গুইর নীরিহ বলে পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন তিনি।
তানজিদের সঙ্গে যোগ দিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন তাওহিদ হৃদয়। ৩৬ বলে ফিফটি স্পর্শ করা তানজিদ দ্বিতীয় বাংলাদেশি, যিনি কিনা টি-টোয়েন্টি অভিষেকে পেলেন ফিফটি। এর আগে ২০০৭ সালে অভিষেকে ফিফটি করেছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিকী।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ওভারে হারায় ক্রেইগ আরভিনকে। তবে অভিষিক্ত জয়লর্ড গুম্বি আর ব্রায়ান বেনেট মিলে এগুছিলেন বেশ ভালোই। তৃতীয় ওভারে শরিফুলকে টানা তিন চারে বড় কিছুর আভাস দিয়েছিলেন বেনেট।
বিপদটা ডেকে আনেন গুম্বি। লম্বা সময় পর ফেরা সাইফুদ্দিনের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল অনায়াসে বাউন্ডারি পাঠানো যেত। তিনি ধরা দেন শর্ট ফাইন লেগে। খানিক পর তার সঙ্গে বেনেটও তালগোল পাকিয়ে রান আউট।
অধিনায়ক সিকান্দার রাজা, শন উইলিয়ামস, রায়ান বার্ল- তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার পান গোল্ডেন ডাক। উইলিয়ামস, বার্লদের ছাঁটেন তাসকিন। লুক জঙ্গুইও টিকতে পারেননি। উইকেট পতনের প্রবল স্রোতে ৪১ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে বসে সফরকারী দল।
৮ম উইকেটে এরপর প্রতিরোধ গড়েন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা আর ক্লাইভ মাদান্দে। দুজনে মিলে ৬৫ বলে যোগ করেন ৭৫ রান। রানে ভরপুর উইকেট তাতে কিছুটা লড়াইয়ের পুঁজি পায় সফরকারীরা। মাদান্দে ৩৯ বলে ৬ চারে ৪৩ করেন। ইনিংসের শেষ বলে ফেরার আগে ৩৮ বলে ৩৪ করেন ওয়েলিংটন।
Comments