মানুষের ভালোবাসায় ফিরে এসেছি: সোহেল রানা

বাংলা সিনেমার নন্দিত নায়ক সোহেল রানা। অনেক কালজয়ী সিনেমার সঙ্গে বরেণ্য এই চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজকের নাম জড়িয়ে আছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি।
সোহেল রানা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন টানা অনেক দিন। ছিলেন লাইফ সাপোর্টেও। ধীরে ধীরে বিপদ কাটিয়ে উঠে এখন বাসায় বিশ্রামে আছেন।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা বলেছেন 'মাসুদ রানা' খ্যাত এই অভিনেতা।
মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসে জীবনকে কীভাবে উপলব্ধি করছেন?
মানুষের ভালোবাসায় ফিরে এসেছি। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে ফিরে এসেছি। ফিরে না-ও আসতে পারতাম। জটিল অবস্থা তৈরি হয়েছিল। আমাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। অসংখ্য মানুষ আমার জন্য দোয়া করেছেন। এদেশের মানুষ আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন। আল্লাহর প্রতি আমার বিশ্বাস অনেক। উপরওয়ালার দয়া ছিল। এজন্য ফিরে আসতে পেরেছি। জীবনকে নতুন করে জানলাম। কদিন ধরে ভাবছি, আমার সমসাময়িক কারা বেঁচে আছেন? যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তাদের অনেকেই বেঁচে নেই। মানুষের মৃত্যু হবেই। মৃত্যু চির সত্য। কিন্ত আগে ভাবতাম বিদায় ঘণ্টা বুঝি অনেক পরে বাজবে। এখন মনে হচ্ছে বিদায় ঘণ্টা বুঝি কাছাকাছি চলে এসেছে।
বাসায় সময় কাটছে কীভাবে?
একদম ঘরে বসে। কথা বলছি কম। হাত কাঁপে এখনো মোবাইল হাতে নিয়ে কথা বললে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলছি। কাশি আছে। শরীর অসম্ভব দুর্বল। হাঁটতে গেলেও কষ্ট হয়। সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছি প্রতি মুহূর্তে।

সিনেমার মানুষজন আপনার খোঁজ-খবর কতটা নিচ্ছেন?
আমি তো সিনেমারই মানুষ। জীবনের ৪৫ বছরের বেশি সময় শুধু সিনেমার সঙ্গেই কাটিয়েছি। আমার যা কিছু অর্জন, সব সিনেমা দিয়ে। কাজেই এই অঙ্গনের মানুষ খোঁজ তো নিবেই। কারও নাম নিতে চাই না। কেউ কেউ ফোনে খোঁজ নিয়েছেন। বাসায় আপাতত বেশি মানুষ অ্যালাউ করা হচ্ছে না বলে আসতে চাইলেও অনুরোধ করছি না আসতে।
এই সময়ে এসে নতুন করে কোনো চাওয়া আছে আপনার?
অভিনয় জীবন নিয়ে আমি হ্যাপি। আফসোস নেই। দু:খবোধ বলতে পারি। সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননা আমি পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।শিল্পীর বাইরে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধাও। কতদিন বাঁচব জানি না, কিন্ত রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারের বিষয়ে আমার একটা অপূর্ণতা কাজ করে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটে গেল। খোঁজ রেখেছেন?
বেশ কিছুদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম ডাক্তারের পরামর্শে। এখন অল্প কথা বলি। পত্রিকা পড়ে, টেলিভিশন দেখে এবং ফেসবুকের কল্যাণে কিছুটা খোঁজ তো রাখি। নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যা হচ্ছে, এটা আমাদের সম্মানটাকে কোথায় নামিয়েছে ওইভাবে বলতে পারছি না। যতদিন বাঁচি সম্মান ও ভালোবাসা নিয়ে থাকতে চাই। মানুষ আমাদের ভালোবাসবে। সেখানে মানুষ সমালোচনা করছে। মিথ্যার একটা সীমা থাকা দরকার। একটি চেয়ার বা পদের জন্য মিথ্যার বেসাতি হচ্ছে। কাদা ছোড়াছুড়ি বলব না। তার থেকে নিচে নেমে গেছে। শুধু অনুরোধ করব, যে রায় হবে দয়া করে তা মেনে নিন। আমাদের সম্মান আমাদেরই রাখতে হবে।
Comments