পুত্রের লাশ কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন অসহায় পিতা
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে যেদিন গরুর জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্যে অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিসের উদ্বোধন হলো ঠিক সেদিনই অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে এক অসহায় পিতা পুত্রের মৃতদেহ কাঁধে করে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে গেলেন। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
খবরে বলা হয়, রাজ্যটির এটাওহ জেলায় স্থানীয় দিনমজুর উদয়বীর সিং তাঁর ১৫ বছরের অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন তাঁর সন্তান আর বেঁচে নেই।
পুত্র শোকগ্রস্থ উদয়বীর তখন পড়েন এক মহা সংকটে। এক দিকে আর্থিক অসঙ্গতির কারণে তিনি পারছেন না একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে, অন্য দিকে, সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে একটি লাশবাহী গাড়ির ব্যবস্থাও করে দিতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই, তিনি কিশোর পুত্রের মৃতদেহ কাঁধে চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে গেলেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা এই ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে, সেই হতভাগা পিতা বলেন, “হাসপাতাল থেকে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে আমি তাতে করেই ছেলের লাশটা বাড়িতে আনতাম। গাড়ি পাইনি তাই বাধ্য হয়েই কাঁধে করে নিয়ে এসেছি।”
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা যোগাযোগ করেন এটাওহ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাজীব যাদবের সঙ্গে। তিনি গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি জন্য দু:খ প্রকাশ করে বলেন, “ওই সময় একটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে চিকিৎসকরা জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত ছিলেন। সে কারণেই হয়তো ওই কিশোরের মৃতদেহ পৌঁছে দেওয়ার জন্যে কোনও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। কিন্তু, এটাও হয়ে থাকলে অন্যায় হয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তারদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর কথাও জানান ওই কর্মকর্তা।
এদিকে, মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের উপমূখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মুরাইয়া গরুর অসুস্থ হলে দ্রুত সেই পশুর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার উদ্বোধন করেন। নিজের ফেসবুকে পেজসহ তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও পরে তিনি এই খবর প্রকাশ করেন।
উত্তর প্রদেশের এই ঘটনা উড়িষ্যার অসহায় দানা মাঝির ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। মৃতদেহ বহনকারী গাড়ির অভাবে রাজ্যটির একটি হাসপাতাল থেকে দানা মাঝি তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি গিয়েছিলেন।
Comments