মতামত: পুলিশ-র‍্যাবের ভিন্ন-ভিন্ন অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হোক

আমরা সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত অবস্থায় রয়েছি। নিহত ‘জঙ্গি’ সারোয়ার জাহানের পরিচয় নিয়ে সম্প্রতি র‍্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে যেভাবে পাল্টা-পাল্টি দাবি উঠেছে তাতে অনেক বিষয় প্রথমবারের মতো আমাদের সামনে এসেছে।

আমরা সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত অবস্থায় রয়েছি। নিহত ‘জঙ্গি’ সারোয়ার জাহানের পরিচয় নিয়ে সম্প্রতি র‍্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে যেভাবে পাল্টা-পাল্টি দাবি উঠেছে তাতে অনেক বিষয় প্রথমবারের মতো আমাদের সামনে এসেছে।

আমরা বিভ্রান্ত, কারণ আমরা জানি না কার কথা বিশ্বাস করতে হবে— র‍্যাব নাকি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের?

র‍্যাব বলছে, সারোয়ার নব্য জেএমবির আমির ছিল। এর একদিন পরই পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হলো সারোয়ার জঙ্গি সংগঠনটির তৃতীয় সারির নেতা। ফলে সারোয়ারের মৃত্যুর খবরে খুশি হওয়ার মতো কিছু নেই।

তাহলে কার কথা ঠিক? এই বিভ্রান্তিরই বা কি কারণ? নিশ্চয়ই দুই পক্ষের কথাই ঠিক হতে পারে না।

আমাদের উদ্বেগের কারণ এটাই। পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোথাও না কোথাও গলদ থেকে যাচ্ছে। জঙ্গিদের সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সবাই বুঝি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় গোয়েন্দা তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই যদি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদের নিরাপদ ভাববো?

র‍্যাব বলছে, নব্য জেএমবি আমির সারোয়ারের সাংগঠনিক নাম আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। কিন্তু পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন তামিম নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা।

এ থেকেই বোঝা যায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা আছে। দুই পক্ষ থেকে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম চলায় পুরো ব্যাপারটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি না কেন দুই দিক থেকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে যাদের মধ্যে খুব সামান্য অথবা একেবারেই গোয়ান্দা তথ্য বিনিময় ও সমন্বয় নেই।

একটি কাজ করতে দুইজন মানুষকে দায়িত্ব দেয়া হলে তাদের মধ্যে কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ও রেষারেষি তৈরি হতে পারে। মাঝখান থেকে কাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জঙ্গিবাদ মোকাবেলার প্রাথমিক দায়িত্ব যদি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের হয় তাহলে অন্য কোন বাহিনী কেন নিজ দায়িত্বে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে? আর যদি এমনটা করতেই হয় তাহলে পুলিশকে জানিয়ে এবং পরামর্শ করে তবেই করা উচিৎ।

বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং এটা নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কোন সুযোগ নেই। আমাদের বিশ্বাস দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি দাবি আমাদের চোখ খুলে দিবে ও শৃঙ্খলা ফিরবে।

Comments