কৃষিজমিতে ড্রেজিংয়ের বালু না ফেলার আহ্বান ৮ পরিবেশবাদী সংগঠনের
খুলনার দাকোপ উপজেলায় পশুর নদী ড্রেজিংয়ের বালু ফেলার জন্য ৩০০ একর কৃষিজমি হুকুম দখলের প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে ৮টি পরিবেশবাদী সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসার সুযোগ চেয়ে সংগঠনগুলো সরকারের ১০টি সংস্থাকে যৌথভাবে চিঠি দিয়েছে।
পশুর নদী ড্রেজিং করে মাটি ও বালু ফেলার জন্য দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নে জমি হুকুম দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন—মানবাধিকার কর্মী ও বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল; এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা; নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির; ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান; আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল; সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; ব্লাস্টের আইনজীবী ও অনারারী ডিরেক্টর সারা হোসেন এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।
চিঠি দেওয়া সরকারি ১০ প্রতিষ্ঠান হলো— সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়; সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়; চেয়ারম্যান, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; জেলা প্রশাসক, খুলনা; পুলিশ সুপার, খুলনা; উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, দাকোপ, খুলনা; পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, খুলনা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালে পশুর নদী ড্রেজিং সংক্রান্ত 'মোংলা বন্দর ইনার বারে ড্রেজিং' শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়। এর অধীনে নদী ড্রেজিং করা মাটি ও বালু ফেলার জন্য মোট দেড় হাজার একর জমি হুকুমদখলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে খুলনার মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ৭০০ একর জমি সরকারিভাবে হুকুম দখলের মাধ্যমে বালু ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০ একর জমিতে বালু ফেলা হয়েছে।
সংগঠনগুলো বলেছে, এই প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষায় (ইআইএ) অসত্য তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে বানিশান্তা ইউনিয়নে ৩০০ একর জমিকে চিংড়ির ঘের হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাস্তবে পুরো মৌজাটিই কৃষিজমি। এখানে ধান, তরমুজসহ সবজি চাষ হয়। মৌজাটিতে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কৃষক পরিবার বসবাস করে যাদের মধ্যে ভূমি হুকুম দখলের কারণে প্রায় ১ হাজার ৬০০ পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ২ হাজারের বেশি পরিবার।
সংগঠনগুলো আরও বলেছে, বানিশান্তার কৃষিজমির মালিকরা তাদের জমিতে মাটি ও বালু না ফেলার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু সবার মতামত উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসন মোংলা বন্দরের অনুকূলে এই কৃষি জমি হুকুম দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, আইন অনুযায়ী, কোনো স্থাবর সম্পত্তি স্বল্প সময়ের জন্য সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য সরকার হুকুম দখল করতে পারে। এক্ষেত্রে জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
Comments