নেই সংযোগ সড়ক, সেতু পারাপারে একমাত্র ভরসা মই

সেতু নির্মিত হলেও সেখানে কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি এখন ইউনিয়ন মানুষের কাছে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বৈরাতীহাট সড়কে ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি পারাপারের একমাত্র ভরসা মই। কারণ সেতু নির্মিত হলেও সেখানে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে, সেতুটি এখন ইউনিয়ন মানুষের কাছে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নির্মিত সেতুটির সঙ্গে সংযোগ সড়ক না থাকায় আশপাশের প্রায় চারশতাধিক মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্ষার সময় সেতুটির কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। আর অন্য সময় সেতুটিতে উঠতে মই ব্যবহার ছাড়া উপায় থাকে না। উঁচু রাস্তা না থাকায় সেতুটির দুপাশে থাকা দুটি মই তাদের একমাত্র ভরসা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর একপ্রান্তে আছে এইচ-আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এপাশে কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় কৃষি জমির পাশ দিয়ে একটি সরু রাস্তা তৈরি করে স্থানীয়রা চলাচল করছেন। সেতুটির উত্তর দিকে আছে বসতবাড়ি, মসজিদ ও পুকুর। সেখানেও নেই মাটির সংযোগ সড়ক। তাই দু'পাশের মানুষকে মই বেয়ে সেতুর ওপরে উঠে চলাচল করতে হয়। মই দিয়ে ওপরে ওঠা কষ্টকর হওয়ায় বাধ্য হয়েই অনেকেই কৃষি জমির আইল ধরে যাতায়াত করছেন।

সেতুটির সঙ্গে যুক্ত তথ্য ফলকের তথ্য অনুযায়ী, '২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এইচআর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হয়বতপুরগামী রাস্তায় হয়বতপুর খালের ওপর সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৪০১ টাকা। এটির দৈর্ঘ্য ৩৬ মিটার।'

মই দিয়ে সেতুর ওপর উঠছিলেন শামছুল হক। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব বয়সীরা মই বেয়ে সেতুর ওপরে উঠতে পারে না। বিশেষ করে বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা। আবার অনেক সময় উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। এই সেতু তৈরিতে দুই বছরের বেশি সময় লেগেছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। সেতুর পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু, সংযোগ রাস্তা না থাকায় সহজে যাতায়াত করা যায় না। দুই দিকে মই আছে, সেই মই ছাড়া সেতুটি অচল।'

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা লোকমান মিয়া বলেন, 'কন্টাক্টরকে অনেকদিন অনুরোধ করেছি সেতুর দুইপাশে মাটি ফেলতে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত মাটি ভরাট করেনি। আমরা সেতুটির এপারে ৬০টি পরিবার বসবাস করছি। প্রতিদিন কত কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়, তা কেউ না দেখলে বুঝবে না। আগে সেতু ছিল না, তখনো কষ্ট হয়েছে। এখন সেতু হয়েও কষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত সেতুর দু'পাশে মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক করা হোক।'

স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নিশাত ইসলাম বলেন, 'সেতু হয়ে আমাদের অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু, রাস্তা তো হয় নাই। এখন মই দিয়ে উঠতে-নামতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমরা চাই দ্রুত সেতুর সঙ্গে রাস্তার সংযোগ দেওয়া হোক।'

আরেক শিক্ষার্থী রনি মিয়া বলেন, 'দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। এখনো পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি। ২৯ লাখ টাকা দিয়ে সেতু তৈরি করে যদি মই দিয়ে পারাপার হতে হয়, তাহলে সেতুর তো দরকার ছিল না। আমরা অনেক কষ্টে এই সেতু হয়ে চলাচল করছি। মই বেয়ে বাইসাইকেল উপরে নেওয়া গেলেও রিকসা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল তো পারাপার করা হয় না।'

এ বিষয়ে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেখানে সড়ক তৈরি করতে মাটির খোঁজ করছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর দু'পাশে রাস্তা নির্মাণের কাজ করা হবে।'

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশফিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দুই পাশের সড়কে মাটি ভরাট করে দেওয়া হবে। মাটি না পাওয়ার কারণে দুই পাশে সড়ক তৈরি করতে বিলম্ব হচ্ছে।'

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি জানার পরে কনট্রাকটরের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি অসুস্থ আছেন। তবে আমাকে জানিয়েছেন দশ দিনের মধ্যে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করবেন।'  

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

1h ago