বিধিনিষেধে কমেছে সবজির দাম, হতাশ কৃষক

স্টার ফাইল ফটো

নিজের ৪০ শতক জমিতে লাউ ও পটল চাষের জন্য স্থানীয় এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন যশোরের রহমতপুর গ্রামের জসীম উদ্দিন। ভালো লাভের আশায় ছিলেন তিনি।

কিন্তু, গত ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী বিধিনিষেধে তার সব আশায় গুড়ে বালি। তিনি সবজির দাম এতটাই কম পাচ্ছেন যে, শ্রমিকদের বেতন ও পরিবহন খরচও মেটাতে পারছেন না তিনি।

বিধিনিষেধের আগে জসীম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে পটল এবং ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস লাউ বিক্রি করতেন। কিন্তু, ঈদের পর থেকে জেলার বড় বাজার ও সাতমাইল বাজারে এক কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে মাত্র তিন থেকে পাঁচ টাকায়। একটি লাউয়ের দাম মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা।

তবে, রাজধানীর চিত্র একেবারেই আলাদা। ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজারে এই দুই ধরনের সবজি যথাক্রমে ৪০ টাকা কেজি এবং ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বছর ফলন ভালো হওয়া সত্ত্বেও বিধিনিষেধের কারণে জসিমের মতো দেশের কয়েক লাখ সবজি চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মতে, উন্নত বীজ পাওয়ায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার গ্রীষ্মে প্রায় ৫৯ দশমিক ছয় লাখ টন সবজি উৎপাদিত হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১০ দশমিক সাত শতাংশ বেশি।

উত্তরাঞ্চলের বগুড়ার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, 'বিধিনিষেধের কারণে আমরা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি।'

আমজাদ ৪৫ শতক জমিতে বেগুন ও ঢেঁড়স চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে তার এক লাখ টাকা ক্ষতি হতে পারে।

উত্তরের আরেকটি জেলা দিনাজপুরের সবজি পাইকার মানিক মিয়ার তথ্য মতে, এ অঞ্চলে প্রায় সব সবজির দাম অন্তত ৫০ শতাংশ কমে গেছে।

'আমি কীভাবে উৎপাদন খরচ তুলব?', বগুড়ার আরেক কৃষক হাশেম আলী অশ্রুসিক্ত হয়ে প্রশ্ন করেন। দাম না পাওয়ায় অন্তত ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।

বিধিনিষেধের আগে তিনি ২৫ শতক জমিতে চাষ করা চিচিঙ্গা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আর এখন কেজিতে পান সর্বোচ্চ সাত টাকা।

সবজি চাষিদের দুর্দশা এখানেই শেষ নয়। তাদের অনেকে হয়তো শীতের সবজির চাষও করতে পারবেন না।

এমনই একজন কৃষক কিসমত আলী। জামালপুরে ২৬ শতক জমিতে কাঁচামরিচ চাষ করেছিলেন তিনি। ফসলের দাম অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় এখন ৭০ হাজার টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।

'আমি পরের মৌসুমে কীভাবে চাষ করব?' বিমর্ষ হয়ে প্রশ্ন করেন কিসমত।

কৃষকের এই অবস্থা হলেও বিধিনিষেধের কারণে সরবরাহ ব্যহত হওয়ায় শহরের কাঁচাবাজারগুলোতে সবজি বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে আগে থেকেই চাপে থাকা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের আরও বেশি চাপে পড়তে হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজারে বেশিরভাগ সাধারণ সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী এবং দক্ষিণবঙ্গ সবজি ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোবারক আলী গত সপ্তাহে যশোরের বড় বাজার থেকে পটল কিনেছিলেন মাত্র তিন টাকা কেজি দরে। কিন্তু, কারওয়ান বাজারে সবজি আনার জন্য তাকে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতি কেজিতে নয় টাকা খরচ করতে হয়েছে।

মোবারক জানান, সাধারণত বড় বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০টি সবজি বোঝাই ট্রাক ঢাকায় যায়। কিন্তু, বিধিনিষেধের মধ্যে ট্রাকের সংখ্যা ১০ থেকে ১২টিতে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রি বিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মতে, বিধিনিষেধের পরিকল্পনা করার সময় সরকারের কৃষকদের কথা চিন্তা করা উচিত ছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় ৮০ লাখ সবজি চাষি রয়েছেন।

সরকার বিধিনিষেধের সময় সরবরাহ ব্যবস্থাকে বাধামুক্ত রাখার উদ্যোগ নিলে চাষিদের কম ক্ষতি হতো বলে উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর আলম।

সেক্ষেত্রে, যশোরের জসিমকে তার পরিশ্রমের ফসল পচার জন্য খেতে ফেলে রাখতে হতো না। ক্ষোভ ও হতাশায় খেত থেকে সবজি তোলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। এ মৌসুমে অন্তত ৪০ হাজার টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন জসিম।

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

2h ago