‘২৫ তারিখে পদ্মা সেতু আমরা উদ্বোধন করবো ইনশাল্লাহ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন যে, পদ্মা সেতুটি বন্যার এই প্রেক্ষাপটে সহজ যোগাযোগে জাতির জন্য একটি আশীর্বাদ হবে, কারণ সরকার এটি ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন যে, পদ্মা সেতুটি বন্যার এই প্রেক্ষাপটে সহজ যোগাযোগে জাতির জন্য একটি আশীর্বাদ হবে, কারণ সরকার এটি ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, '২৫ তারিখে পদ্মা সেতু আমরা উদ্বোধন করবো ইনশাল্লাহ এবং এই উদ্বোধনের পরে এটাও আল্লাহর একটা আশীর্বাদ হবে। কেননা, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারবো।'

আজ রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা ক্রীড়াবিদদের মধ্যে সম্মাননার চেক বিতরণকালে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি মনে করি, পদ্মাসেতু এমন একটা সময় উদ্বোধন করতে যাচ্ছি সে সময় বন্যা শুরু হয়ে গেছে এবং এই বন্যা কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবিলা, বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সহযোগিতা করার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে। বন্যার্তদের রিলিফ দেওয়া থেকে ওষুধ সরবরাহ এবং খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি আরও সহজতর হবে।

'৮৮ সালের বন্যায় গোপালগঞ্জে আটকা পড়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তখন এরকম পদ্মা সেতু থাকলে সহজেই চলে আসা সম্ভব হতো।

তিনি '৯৮ সালে বাংলাদেশের সব থেকে ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ঠিক সেই বন্যার আগেই আমরা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। আর সেটা করেছিলাম বলেই উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনসহ সকল কাজের সুবিধা হয়। বন্যায় নদীগুলো আরও ভয়ংকর হয়ে উঠলে প্লাবিত দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে সুবিধাটা পায়। যার ফলে বন্যা সফলভাবে মোকাবিলা সম্ভব হয়।

সে সময় বিবিসি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রচার ছিল—সে বন্যায় প্রায় দু'কোটি লোক না খেতে পেয়ে মারা যাবে। কিন্তু তার সরকার বলেছিল, 'একজন মানুষকেও তার সরকার না খেয়ে মরতে দেবে না' এবং সেটা সম্ভব হয়েছিল। আর এই কাজে সেই সেতুটা তখন বিরাট কাজে এসেছিল, বলেন তিনি।

খেলাধূলাকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ তৈরিতে তার সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যাও আমরা মোকাবিলা করবো এবং খেলাধূলাও আমাদের চলবে, সবই আমাদের চলবে। এটাই আমাদের জীবন এটাকেই মেনে নিতে হবে।

এটাই বাস্তব এবং বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে এবং বিশ্ব সভায় আমরা মাথা উঁচু করেই চলবো, উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে যেমন করোনার প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরদিকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। এবারের বন্যাটা একটু বেশিই ব্যাপক হারে এসেছে। 

বন্যায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন সেনাবাহিনী নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠান বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা, তাদের ত্রাণ দেওয়া থেকে শুরু করে সব সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বিভিন্ন এলাকায় সহযোগিতা করছেন। খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছেন।

পাশাপাশি স্যালাইনের ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য যা যা দরকার হতে পারে তার জন্য প্রস্তুতিও সরকার নিয়েছে।
পানি নামার সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায় দেশের বন্যার এই চিত্র ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে এই পানি আজ একটু নামতে শুরু করেছে। কিন্তু পানি যখন নামবে, তখন অন্যান্য অঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করবে। এটা আমাদের প্রাকৃতিক নিয়ম। কাজেই আমাদের বিশেষ করে ময়মনসিংহ বিভাগ, রংপুর বিভাগেও বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা আগে থেকেই সতর্কতা আমরা নিচ্ছি এবং সেই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য যা যা করনীয় আমরা সেটাও করে যাচ্ছি।

সিলেট-সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে সারা দেশের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার কথাও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। ১০-১২ বছর পরপর দেশে বড় আকারের একটা বন্যা দেখা দেয় বলে তার অতীত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সবাইকে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছিলাম, আমাদের সরকারের যারা তাদের সবাইকে বলেছিলাম, এবারে বন্যাটা একটু বৃহৎ আকারে আসবে। কাজেই সবাইকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কাজেই আমাদের প্রস্তুতিও আছে।

তিনি বলেন, আবার এই পানি যখন নামবে কোন না কোন অঞ্চল যখন প্লাবিত হবে। ঠিক শ্রাবণ মাস পর্যন্ত থাকবে আবার শ্রাবণ  থেকে ভাদ্র পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। বাংলাদেশের যদি আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশটা দীর্ঘদিন থেকে দেখি এটাই হচ্ছে নিয়ম, এটা হবে। যখন এ রকম বন্যা আসে পানি এভাবে প্লাবিত করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা তার সরকার নিচ্ছে।

বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মায় সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসা নানা বাধা সফলভাবে মোকাবিলা করার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, অনেকটা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই বলেছি, আমরা নিজেদের টাকায় এই সেতু করবো। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে পারে, কারো কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা চেয়ে নয়, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে, সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। কাজেই আমরা মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলবো। কারণ, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিজয়ী জাতি হিসেবেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো।

করোনা এবং দেশের বন্যা পরিস্থিতির জন্য বর্তমান সময়কে একটু অস্বাভাবিক উল্লেখ করে কৃতি খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দিতে পারার বিষয়টা সব সময়ই আনন্দের বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, খেলার মাঠে সব সময় চিন্তায় রাখতে হবে আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি আমরা বিজয়ী জাতি। হার-জিত খেলায় আছে এটা ঠিক কিন্তু মাথায় এটা রাখতে হবে যে আমাকে জিততে হবে।

প্রধানমন্ত্রী খেলাধূলায় পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালি ব্যবসা করবেন আর ইন্ডাস্ট্রি করবেন আর পয়সা বানাবেন সেটা তো হয় না। দেশের জন্য তো কিছু করতে হবে। এটাই আমি চাই। এই মেসেজটা আমাদের ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেওয়া উচিত।

বেসরকারি খাতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত আমরা সহযোগিতা করবো ততো উৎকর্ষতা বাড়বে। যারা খেলবে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে, তাদের জীবন জীবিকার সুযোগটাও আমাদের করে দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Tehran signals no retaliation against Israel after drones attack Iran

Explosions echoed over an Iranian city on Friday in what sources described as an Israeli attack, but Tehran played down the incident and indicated it had no plans for retaliation - a response that appeared gauged towards averting region-wide war.

2h ago