'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে'
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে দশম।
এছাড়া বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ পরিস্থিতি ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্রনিক কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ এবং গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সভায় এসব কথা বলেন তারা।
সভায় 'জলবায়ু পরিবর্তন এবং কিডনি' বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের প্রধান নেফ্রোলজিস্ট অধ্যাপক ব্রি. জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মামুন মোস্তাফী।
তিনি বলেন, 'গত ২০ বছরে ২০০ বছরের চেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বলছে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ু দূষণ, নদী ও সাগরের পানি দূষণ, অতিমাত্রায় খরা ও অতিমাত্রায় বন্যা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'কিডনি রোগ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত তা জানার জন্য ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়ার একদল চিকিৎসক ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্য়ন্ত ব্রাজিলের ১ হাজার ৮১৬টি শহরের সমস্ত হাসপাতালে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে গরম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই ৫ বছরে কী পরিমাণ কিডনি রোগী ভর্তি হয়েছেন। সমীক্ষায় তারা দেখলেন ২৭ লাখ লোক গরমের কারণে কিডনিজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটা ওই দেশের জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের মধ্যে কত জন লোক গরমের কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে তা ভেবে দেখুন।'
ডা. মামুন মোস্তাফী বলেন, 'গরমের কারণে আমাদের শরীরে নানান রকমের পরিবর্তন হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো হিট স্ট্রোক। হিট স্ট্রোক হলে মানুষের কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। নানান রকম সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রবলেম হতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্য রয়েছে শিশু ও বয়স্করা, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এছাড়া যারা বিভিন্ন ধরনের রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত রয়েছে তাদের মধ্যেও গরমের কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা বেশি।'
'সম্প্রতি থাইল্যান্ড, মালেশিয়া ও ভারতে দেখা গেছে যুবক শ্রেণির শ্রমিকদের মধ্যে বিশেষ করে যারা ধান ও আখক্ষেতে প্রচুর গরমের মধ্যে কাজ করছেন তারা কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর কারণ হলো তাদের প্রচুর ঘাম হচ্ছে, মাসেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত কায়িক পরিশ্রমের কারণে তারা কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এধরনের কাজ করার সময় শ্রমিকদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং পর্য়াপ্ত বিশ্রামও নিতে হবে। তা না হলে তাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে,' বলেন তিনি।
সভায় 'যুদ্ধ এবং কিডনি' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থান করেন অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী চৌধুরী।
তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগ এবং যুদ্ধ বিগ্রহ মানুষকে শারীরিকভাবে আহতের পাশাপাশি মানসিক চাপও বৃদ্ধি করছে, যা পরোক্ষভাবে মানুষকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার দিকে ধাবিত করছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মনজুর কাদির আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা মায়া। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন।
এর আগে বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়।
Comments