‘হাজার পিস ইয়াবা হয়ে গেছে ২০ পিস’, তদন্তের নির্দেশ আদালতের
নাটোরে মাদক উদ্ধারের পর জব্দ তালিকায় কম দেখানোর অভিযোগ উঠেছে নাটোর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণ মোহন সরকারের বিরুদ্ধে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২০১৭ সালে দায়ের করা এক মামলার শুনানিকালে এক সাক্ষীর তোলা এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ শুক্রবার বিকেলে নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. শহীদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এসআই কৃষ্ণ মোহন সরকারের বিরুদ্ধে সাক্ষীর তোলা অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি অভিযোগটি তদন্ত করে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আদালতকে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। শুনানিকালে জেলার সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন সরকার অভিযোগ করেন, এসআই কৃষ্ণ মোহন সরকার জব্দ তালিকায় মাদকের পরিমাণ কম দেখিয়েছেন।
কৃষ্ণ নিজেই এই মামলার বাদী এবং তিনি এজাহার প্রস্তুত করেছেন। সূত্র জানায়, ছাতনী ইউনিয়ন এলাকার মাঝদিঘা স্কুলপাড়া থেকে ২০১৭ সালে ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ নুরজাহান বেগম এবং জাহাঙ্গীরকে আটক করে ডিবির একটি দল। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কৃষ্ণ মোহন সরকার। পরবর্তীতে তিনি বাদী হয়ে সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। নুরজাহান বেগমকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং জাহাঙ্গীরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তোফাজ্জল হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দেন যে, পুলিশ তার সামনে ১০ প্যাকেট (প্রতি প্যাকেটে ১০০ পিস) ইয়াবা এবং ৩ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ পিস) ফেনসিডিল উদ্ধার করেছিল।
অথচ জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে, ২০ পিস ইয়াবা ও ৭০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে গঠিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার নুরজাহান বেগমকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
রায়ে সাক্ষী তোফাজ্জল হোসেন সরকারের তোলা অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।
তোফাজ্জল হোসেন সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, ডিবি অভিযান চালানোর সময় আমাকে ফোন করে ডেকে নেয়। আমার উপস্থিতিতে ১ হাজার পিস ইয়াবা এবং ১৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ নুরজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে রাস্তা থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মাত্র ২০ পিস ইয়াবা ও ৭০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের কথা উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ।
কৃষ্ণ মোহন সরকার বর্তমানে সিরাজগঞ্জ আদালতে কর্মরত। যোগাযোগ করা হলে টেলিফোনে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন সময় কাজ করতে গিয়ে তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। কারণ তিনি নানা বিষয়ে তদবির করতেন কিন্তু আমি শুনতাম না। সেই কারণে আমার প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে এমন কথা বলে থাকতে পারেন। আসামিদের কাছ থেকে যে পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে সেটাই জব্দ তালিকা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।'
আদালতের আদেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কৃষ্ণ জানান, তিনি আদেশের বিষয়ে অবগত নন।
Comments