২০ বছরে একদিনও বন্ধ থাকেনি যে হোটেল

পিরোজপুর শহরের সাধনাপুল সংলগ্ন প্রেসক্লাব সড়কে প্রায় ২০ বছর আগে একটি ভাতের হোটেল চালু করেন শহরেরই বাসিন্দা কালা চাঁন দে। নাম দিয়েছিলেন হোটেল সততা।
শহরের অন্যান্য হোটেলগুলো বিশেষ দিন, যেমন ঈদের সময় প্রায় সপ্তাহখানিক বন্ধ থাকলেও চাঁনের দোকান কখনো বন্ধ হয় না। তাই শহরে হোটেলের খাবারের ওপর নির্ভলশীলদের আহারের ব্যবস্থা হয় এই হোটেলেই।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায় হোটেল সততায়। হিন্দু-মুসলিম সবাই যান এ হোটেলে।

হোটেলের কর্মী সবাই চাঁনের পরিবারের সদস্য। স্ত্রী মালতী রানী দে খাবার রান্না করেন এবং ছেলে সুজন কুমার দে পরিবেশন করেন। চাঁন দে ক্রেতাদের কাছ থেকে খাবারের দাম নেন। তবে মাঝেমধ্যে তিনি নিজেও খাবার পরিবেশনের কাজ করেন। কাজের চাপ বেশি হলে ২-১ জন আত্মীয়কে নিয়ে আসেন হোটেলের কাজের জন্য।
কালা চাঁন দে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সকালে তার হোটেলে ভাত, ভর্তা, সবজি এবং ডাল দিয়ে খেতে ২০-২৫ টাকা খরচ হয়। দুপুরে কিংবা রাতে মাছ বা মাংস দিয়ে খেতে ৮০-৮৫ টাকা খরচ হয়।
তবে শহরের অন্যান্য হোটেলে এই খাবারের জন্য ন্যুনতম ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়।
সততা হোটেলে প্রতিদিন দেড় শতাধিক মানুষ নিয়মিত খাবার খান। তাদের মধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও শ্রমজীবী মানুষ আছেন।
করোনাকালেও হোটেল সততা প্রতিদিন খোলা ছিল। একদিনের জন্যও এ হোটেলটি বন্ধ হয়নি।
চাঁনের ছেলে সুজন ডেইলি স্টারকে জানান, ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে হোটেলে কাজ করছেন তিনি। শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যেই নয়, বরং মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়েই তারা হোটেলটি পরিচালনা করেন।

ঝড়, বন্যা কিংবা অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও তারা হোটেলটি চালু রাখেন বলে জানান সুজন। তবে ব্যবসাটি থেকে খুব বেশি লাভ হয় না তাদের।
হোটেলটিতে দীর্ঘদিন ধরে খাবার খান স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র। তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, ঈদ কিংবা বিভিন্ন কারণে শহরের সব হোটেল বন্ধ থাকে। তখন হোটেলের খাবারের ওপর নির্ভরশীলদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু হোটেল সততার কারণে তাকে কখনো এ সমস্যায় পড়তে হয়নি।
হোটেলের আরেক গ্রহীতা শহরের একটি মিষ্টির দোকানের কর্মচারী রানা কুমার ঘোষ ডেইলি স্টারকে জানান, অন্যান্য হোটেলের তুলনায় সততা হোটেলে খাবারের দাম অনেক কম। তাই অল্প টাকায় এখান থেকেই তিনি খাবার খান।

হোটেল সততা অতি সাধারণ হোটেল হলেও, এর মাধ্যমে অনেক মানুষ উপকৃত হয় বলে জানান এ হোটেলের আরেক সেবা গ্রহীতা সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'অন্যান্য সাধারণ হোটেলের চেয়ে হোটেল সততার খাবারের মান কোনো অংশে খারাপ না। এখানকার রান্নাও ভালো।'
এ হোটেলটি না থাকলে ঈদের এক সপ্তাহ কষ্ট করে খেতে হতো বলে জানান তিনি।
Comments