সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিএনপি নেতার প্রশ্নের মুখে সারজিস আলম

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সম্মেলনকক্ষে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এক বিএনপি নেতার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে তারা বাগবিতণ্ডায় জড়ান।
বাগবিতণ্ডার একটি ভিডিও ক্লিপ সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সে সময় সভায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের দাঁড়িয়ে দেখতে দেখা গেছে। তবে আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উপস্থিত ছিলেন না।
সূত্র জানিয়েছে ওই বিএনপি নেতার নাম মতিউর রহমান। তিনি আটোয়ারী উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
দুই মিনিটি ৪০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সারজিস আলমকে বলতে শোনা যায়, 'আমি তাদের কাছে জানতে চাই, আমার সুযোগ আছে আটোয়ারীর মানুষের জন্য কিছু করার। তাদের কোন কোন জায়গায় প্রয়োজন, এটা আমি তাদের কাছে জানতে চেয়ে তারা যদি সমস্যাগুলো বলে, আমি যদি আটোয়ারীর জন্য কোনো কিছু বের করে আনতে পারি, এটা ভালো না খারাপ?'
এ সময় মতিউর রহমান বলেন, 'তাহলে এটা ডিসি সাহেবের মাধ্যমে হোক, ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে হোক।'
সারজিস বলছেন, 'তাদেরকে আমি আহ্বান জানিয়েছি যে, আমার সুযোগ আছে।'
'আমার জিজ্ঞাসাটা হচ্ছে, এ ধরনের মিটিং কি তারা করতে পারেন, আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই,' প্রশ্ন রাখেন মতিউর রহমান।
এটা কোনো অফিসিয়াল মিটিং না জানিয়ে সারিজস পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, 'আমি যদি কী কী দরকার এটা তাদের কাছে জেনে নিয়ে আসি, এটা হওয়া উচিত কি না?'
মতিউর বলেন, 'বাবা, এটা কিন্তু তোমরা রাজনৈতিক দল এনসিপি হওয়ার আগে ছিল। তখন কিন্তু আমরা মেলায় (স্থানীয়ভাবে আয়োজিত আলোয়াখোয়া রাশ মেলা) সহযোগিতাও করেছিলাম। যেহেতু রাজনৈতিক দল এখন।'
সারজিস বলেন, 'মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মহাসচিব হিসেবে যদি পারেন, একটা দলের পদধারী হয়ে, তিনি এখন এমপিও না, মন্ত্রীও না, উনি পারে কি না? উনি যদি পারেন, আমিও একটা দলের হয়ে পারি।'
মতিউর জানান, 'উনি কোনো কনফারেন্স রুমে মিটিং করেন না।'
'এটা কোনো অফিসিয়াল মিটিং না'—বলেন সারজিস।
মতিউর রহমানকে বলতে শোনা যায়, 'আমি উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, তারা কোন বিধানে এসেছেন। একটা রাজনৈতিক দলে মুখ্য সংগঠকের সঙ্গে তারা (সরকারি কর্মকর্তারা) কোনো মিটিং করতে পারেন কি না? তারা এটা পারেন না। কোন আইনে এসেছেন একজন নাগরিক হিসেবে এটা জানতে চাই।'
সারজিস বলেন, 'কে বলেছে পারে না!'
কথোপকথনের মধ্যে সারজিস আলম মতিউর রহমানকে একাধিকবার বলতে থাকেন, 'টোন লো করে (গলার স্বর নামিয়ে) কথা বলেন।'
সূত্র জানায়, দুপুরে সারজিস আলম আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানদের ডাকেন। পরে তিনি ইউএনওর সম্মেলন কক্ষে তাদের নিয়ে বৈঠক করেন।
পরে তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জনসংযোগ করেন।
যোগাযোগ করা হলে মতিউর রহমান মোবাইল ফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি আমাদের নেতা ব্যরিস্টার নওশাদ জমিরের ঈদ শুভেচ্ছা সম্বলিত কার্ড দিতে উপজেলার বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরে যাই। এ সময় কাউকেই না পেয়ে জানতে পারি, তারা ইউএনও অফিসের সম্মেলন কক্ষে সারজিস আলমের সঙ্গে মিটিং করছেন।'
'পরে বিষয়টি আমি আটোয়ারী উপজেলার দায়িত্বে থাকা বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোনে জানাই। তিনি উপস্থিত না থাকায় কোনো উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়টি পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছিলাম। সারজিস আলমের সঙ্গে অন্যান্য কর্মকর্তারা বেরিয়ে এলে আমি তাদের কাছে জানতে চাই যে, তারা অফিস সময়ে এ ধরনের মিটিংয়ে আসতে পারেন কি না? সে সময় সারজিস আলম এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন।'
সারজিস আলম মোবাইল ফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের আটোয়ারী উপজেলাটা খুবই পিছিয়ে পড়া একটা উপজেলা। এখানে পাঁচটি সরকারি অফিসের প্রধান নাই। আমি মূলত ওই দিক দিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের সমস্যার কথা জানতে সেখানে যাই। পরে তাদের সঙ্গে ইউএনও অফিসের একটা কক্ষে বসি।'
'কথা বলে বের হয়ে আসার সময় একজন ব্যক্তি; তাকে আমি চিনিও না, তিনি এভাবে কথা বলতে আসেন। আসলে তারা নিজেরা কিছু করতে পারবেন না। অন্য কেউ করলে তাদের সহ্য হয় না আরকি! ওই লোকটাও ওই একই ধরনের। এগুলো থাকবেই। এগুলোকে পাত্তা দিলে কাজে মনযোগ দেওয়া যাবে না,' উল্লেখ করেন তিনি।
Comments