খোলা চিঠি দিয়ে ‘নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রতিবাদ’ সুলতান মনসুরের
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা, আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ গণমাধ্যম, স্থানীয় ভোটার ও জনগণের কাছে খোলা চিঠি দিয়ে ভোটের মাঠের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের কর্মী সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপারে গণমাধ্যম ও স্থানীয় জনগণের কাছে তিনি এই খোলা চিঠি দিয়েছেন। লিফলেট আকারে তা স্থানীয় ভোটার ও জনগণের হাতেও পৌঁছানো হচ্ছে। রোববার দুপুরে গণমাধ্যমে প্রেরিত তার খোলা চিঠিটি তুলে ধরা হল।
“শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পূর্বক আমার প্রাণপ্রিয় কুলাউড়াবাসী, স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের প্রতি নিবেদন করছি, কুলাউড়ার গত সাত দশকের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের ইতিহাস। ধনী, দরিদ্র, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সামাজিকতা ও ভ্রাতৃত্বের ইতিহাস। যা আমরা সকলেরই পরম গৌরবের তীর্থক্ষেত্র। যা কুলাউড়ার সুনাম ও ঐতিহ্য। দলমত নির্বিশেষে সম্প্রীতিময় ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়া আমাদের জন্য সম্মানজনক। কিন্তু আজ কেন এ কুলাউড়ার জনগণকে বিভক্ত করা হচ্ছে? আমাদের পারস্পরিক সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে। আমাদের তরুণ সমাজকে হিংসা, বিদ্বেষ ও পারস্পরিক ঘৃণার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বরাবরই যেকোনো নির্বাচনের সময় কুলাউড়ার মানুষ স্বচ্ছন্দে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন, যাকে খুশি তাকে ভোট প্রদান করেছেন, নির্বাচনী আনন্দ আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গেও বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির মাধ্যমে উপভোগ করেছি। এতে সকলেই সম্মানিত হয়েছি। যা ছিল এই কুলাউড়ার অহংকার আমাদের পূর্ব পুরুষগণের শিক্ষা। তবে আজ কে বা কাদের ইন্ধনে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের শিক্ষাকে পদদলিত করছি।
আজ নির্বাচনী আনন্দযজ্ঞের সময়ে ঐক্যফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আমার নেতা-কর্মীদের বিনা কারণে ও কৃত্রিম অজুহাতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ক্ষমতার বদৌলতে তাদের নামে মিথ্যা মামলা, হুলিয়া জারি করা হচ্ছে। তারা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছেন না। তাদের পরিবার পরিজন উৎকণ্ঠায়। আজ তাদের মায়ের চোখের অশ্রু আর বোনের কান্নায় কুলাউড়ার আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে। সমাজ হচ্ছে কলুষিত। কেন বিনা অপরাধে কারান্তরীণ সন্তানের জন্য একেকজন পিতার করুণ আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে? কেন স্বামীর জন্য প্রিয়তমা স্ত্রীর কান্না আর সন্তানদের আহাজারিতে কুলাউড়ার ঘরে ঘরে উৎকণ্ঠা ও বিষাদের করুণ সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে? এতো আমাদের পূর্ব পুরুষের মানবিক মূল্যবোধের কুলাউড়া নয়! এভাবে কি কোনো সম্প্রীতির সমাজ কল্পনা করা যায়? এভাবে কি সামাজিক মূল্যবোধের সহাবস্থান সম্ভব? যা অতীব দুঃখজনক। আমি মিথ্যা মামলা ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার প্রত্যেক নেতাকর্মী এবং তাদের বেদনাকাতর ও উৎকণ্ঠিত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
রাজনীতি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের সমাজে একই পরিবারের সন্তান নানা দলের রাজনীতি করেন। সুতরাং আমরা নানা দল ও আদর্শে বিভক্ত থাকলেও আমাদের মধ্যে আত্মীয়তা, রক্ত ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি পরিবারে আঘাত লাগলে অন্য পরিবারে কান্নার রোল উঠে। তাই আমি সর্বদা সম্প্রীতিময় ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়ায় বিশ্বাসী।
আমি যখন এমপি ছিলাম একটি মুহূর্তের জন্য ঘুণাক্ষরেও আমি প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের দমনের চিন্তা করি নাই। আমি দেখেছি কুলাউড়ার মান মর্যাদা। আমি দেখেছি কুলাউড়াবাসীর ঐক্য ও গৌরব। ছলে বলে কৌশলে প্রতিপক্ষ দমনের কৌশল কখনো রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে না। তা মানুষের মাঝে ঘৃণা ও হিংসার বিষবাষ্প ছড়ায়। যা একটি সমাজের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেয়। আজ কুলাউড়ার নির্বাচনী মাঠে প্রতিটি দলের প্রার্থী, নেতাকর্মী, সংগঠক, সমর্থক, ভোটার, কুলাউড়ার সাধারণ জনগণ ও প্রশাসনের উদ্দেশে আমার আকুল আবেদন, আসুন আমরা স্বাধীনভাবে প্রত্যেকের নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাই এবং কুলাউড়ার আবহমান কালের চিরায়ত সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষা করি। এরই সঙ্গে যারা বিনা অপরাধে ছলে বলে কৌশলে ঘৃণ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর সাজানো মিথ্যা মামলা-হুলিয়া জারির পাঁয়তারা করছেন তাদের প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করি। এরা আমাদের বন্ধু নয় শত্রু। এদেরকে সমাজ ও মানবতার দুশমন হিসেবে চিহ্নিত করি। সম্প্রীতিময় কুলাউড়ার জয় হোক। অশুভ শক্তির বিনাশ হোক। বিনীত আপনাদের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।”
উল্লেখ্য, ১৬ ডিসেম্বর রাতে কুলাউড়ার কাদিপুরে, ১৯ ডিসেম্বর রাতে ভূকশিমইল ও হাজিপুরে এবং ২২ ডিসেম্বর রাতে ভাটেরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ১৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
Comments