সুবিধাজনক অবস্থানে বড় ঋণগ্রহীতারা, বিপদে এসএমই
মার্চে করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই), কৃষক এবং নিম্ন-আয়ের গোষ্ঠী। তাদের জন্য সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করে, তার বিতরণ গতি পায়নি ব্যাংকগুলোর অনীহায়।
বিপরীত চিত্র বৃহৎ শিল্প ও পরিষেবা খাতের। তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ খুব দ্রুত বিতরণ করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) এবং নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ দ্রুত বিতরণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, উদ্যোগী হচ্ছে না ব্যাংকগুলো।
দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক লাখ ছয় হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার।
এর মধ্যে সহজ শর্তে ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
বৃহৎ শিল্প ও পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঘোষিত প্যাকেজের ৮১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে এবং ঘোষিত ৩৩ হাজার কোটি টাকার বাকি অর্থ এ মাসের মধ্যেই বিতরণ করা শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, ‘বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত সুসংহত এবং তারা দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকের কাছে জমা দিয়েছে। ফলে দুটি প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা তারা সহজেই নিতে পেরেছে।’
তিনি জানান, বড় ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতার পরিকল্পনা সময়মতো ব্যাংকগুলোতে জমা দিয়েছে। ফলে ঋণদাতাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এসএমই ও কৃষিক্ষেত্রের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন হয়েছে কম। কারণ, ঋণদাতারা প্যাকেজগুলো প্রচারে অনীহা প্রকাশ করেছে।
দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ হাজার ৬৬৪ জন ঋণগ্রহীতাকে পাঁচ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা দিয়েছে।
এই ঋণ নয় শতাংশ সুদে দেওয়া হবে। যার মধ্যে চার শতাংশ পরিশোধ করবে গ্রাহক এবং পাঁচ শতাংশ পরিশোধ করবে সরকার।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা সাধারণত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় একটি বড় অংশের মুনাফা করে। তবে, মহামারির কারণে এ বছর তারা এই দুই উৎসবে ব্যবসা করতে পারেনি।
এমরানুল হক বলেন, ‘এসএমইগুলো এখনো সংকটমুক্ত হয়নি। ব্যবসার অবস্থা ভালো না থাকায় অনেক ব্যাংক ঋণ দেওয়ার বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো মূল্যে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ ত্বরান্বিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, এসএমই খাতের ক্রেডিট গ্যারান্টির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায় এড়াতে পারে না।
এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা করা উচিত ছিল জানিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে আছি। এসএমইগুলো অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
বাংলাদেশে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সংখ্যা ৭৭ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক ওয়েবিনার চলাকালীন জানান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রের জন্য বরাদ্দকৃত পাঁচ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা ৮৭ হাজার ৫২৬ জনের মাঝে বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।
এই ঋণ বিতরণ দ্রুত শেষ করতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক কর্মকর্তা।
স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া তিন হাজার কোটি টাকার প্রোণোদনা প্যাকেজের ৪৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংক।
রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো সময় মতো ব্যবস্থা নিলে এই প্যাকেজ থেকে বিতরণ আরও বেশি হতো।
সাতটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক কোনো বিতরণ না করায় গত বৃহস্পতিবার তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে Big borrowers gain, SMEs still in pain
Comments