করোনায় রুগ্ন ভারতের উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থা
‘আমাকে বাড়ি বিক্রি করে একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে উঠতে হয়েছে। কারণ, আমি গৃহঋণ পরিশোধ করতে পারছিলাম না’— এমন করুণ কথা বললেন ভারতে করোনার কারণে চাকরি হারানো এক পাইলট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩৮ বছর বয়সী এই পাইলট জানান, তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ার ইন্ডিয়ায় কাজ করতেন। সময় মতো কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারায় ব্যাংক তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করেছে।
‘ব্যাংকের লোকজন বাসায় আসতে শুরু করায় তা আমার জন্যে খুবই বিব্রতকর হয়। ফলে, কম দামে বাড়িটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক,’ যোগ করেন তিনি।
এক সময় এয়ার ইন্ডিয়ায় কাজ করা ছিল লোভনীয় বিষয়। ২০১১ সালের দিকে একজন সিনিয়র পাইলট ১ কোটি রুপি পর্যন্তও আয় করতেন। এখন সেই সংস্থাটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর থেকে সংস্থাটি বিক্রির জন্যে ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে। করোনা মহামারির এই সময়ে ক্রেতা পাওয়ার আশাও ক্ষীণ।
করোনা মহামারি ভারতে ব্যাপক সংখ্যায় জীবনহানির পাশাপাশি দেশটির উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থাগুলোকেও রুগ্ন করে দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জাননো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে শুধু যে এয়ার ইন্ডিয়াই সংকটে রয়েছে তা নয়। দেশটির এক সময়ের সম্ভাবনাময় উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থাগুলোও সাম্প্রতিক সময়ে লোকসানের পথে হাঁটতে শুরু করে।
ভারতের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি এয়ারলাইন্স জেট এয়ারওয়েজসহ দেশটির সাতটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ছিল সাফল্যের গল্প। গত কয়েক বছর থেকে এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবসা হারাতে থাকে। জ্বালানির উচ্চমূল্য, করের বোঝা, কম চাহিদা ও তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে এমন করুণ দশা হয়। এখন করোনা মহামারির কারণে তা প্রায় ধসে পড়ছে।
ভারতের আটটি এয়ারলাইন্সের মধ্যে এখন শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ইন্ডিগো। গত এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এয়ার ডেকানে কর্মরত সবাইকে বিনা বেতনে ছুটিতে রাখা হয়েছে।
সিএপিএ— সেন্টার ফর অ্যভিয়েশনের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কপিল কাউল বলেন, ‘ভারতের এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে।’
ভারতে করোনা লকডাউনের কারণে উড়োজাহাজ চলাচল স্থগিত রয়েছে। কয়েকটি এয়ারলাইন্স অপারেশন শুরু করলেও যাত্রী স্বল্পতায় ভুগছে তারা।
গত বছর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৭০ লাখ যাত্রী বহন করেছিল ভারতের এয়ারলাইন্সগুলো। এ বছর সেই একই সময়ে তারা যাত্রী বহন করেছে ১ কোটি ১০ লাখ। আগামী বছর এই সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন রেটিং এজেন্সি আইসিআরএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিনজাল শাহ।
ইন্ডিয়ান কমার্শিয়াল পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ কৃর্তি বলেন, অর্থ সঙ্কটে পড়ে এয়ারলাইন্সগুলো চাকরি ছাঁটাই করছে। চলতি বছর এয়ার ইন্ডিয়া ৪৮ জন পাইলটকে চাকরিচ্যুত করেছে। অন্য এয়ারলাইন্সগুলো পাইলটদের বিনা বেতনে ছুটিতে রেখেছে অথবা ৩০ শতাংশ বেতন কমিয়ে দিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব মতে, ভারতে অ্যাভিয়েশন খাতে ৩০ লাখের মতো কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের পাইলট অমলেন্দু পাঠক বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কাজ করা মানসিকভাবে খুবই চ্যালেঞ্জিং। তবুও কাজ করে যাচ্ছি। এক সময় অনেক অর্থ উপার্জন করতাম। এখন পরিবারের খাবার যোগানোর মতো অর্থ আয় করছি। সঞ্চয় যা ছিল তা শেষের পথে।’
Comments