পদ্মায় পানি কম, জিকে সেচ পাম্প বন্ধ

পদ্মা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুটি প্রধান পাম্প।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জিকের ইনটেক চ্যানেলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাম্প বন্ধ রাখতে হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুটি প্রধান পাম্প।

গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে পাম্প দুটির পানির মূল সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জিকের ইনটেক চ্যানেলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাম্প বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে তারা বলছেন এটি সাময়িক।

সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউসে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরেই পদ্মায় পানির স্তর কমে আসে। এর মধ্যে জিকের ইনটেক চ্যানেলে পানি পাওয়া গেছে চার দশমিক এক থেকে চার দশমিক ১৮ মিটার। এটা রিডিউসড লেভেল পর্যন্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘পানি সরবরাহ চার দশমিক পাঁচ মিটার রিডিউসড লেভেলের নিচে নামলেই পাম্প মেশিনে পানি উত্তোলন করা যায় না।’

১৯৫৪ সালে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পটি পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল। এই প্রকল্পের আওতায় দুটি মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। এই চার জেলার মোট ১৩টি উপজেলায় এই কার্যক্রম বিস্তৃত।

জিকে সূত্র জানায়, প্রতিবছর জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে শুরু হয় পানি সরবরাহ। চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি সেচ পাম্প চালু করা হয়েছিল। এই পাম্পগুলো একযোগে প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার ২০০ কিউসেক পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানোর কথা ছিল।

কৃষকরা ইতোমধ্যে বোরো রোপণ সম্পন্ন করেছে। ধান গাছের পরিচর্যার এই সময়ে প্রচুর পানি প্রয়োজন। হঠাৎ পানি সরবরাহ না পেয়ে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি।

সেচ প্রকল্পের প্রধান পয়েন্ট কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পানি সংরক্ষণ খাল থেকে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর পানি সরবরাহের শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালে পানি নেই।

দু-একদিনের মধ্যে পানি সরবরাহ না এলে ধানের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলছেন, ‘ফারাক্কা চুক্তির আলোকে এ মৌসুমে গঙ্গার পানির প্রাপ্যতা অনুযায়ী ১০ দিন বাংলাদেশ এবং ১০ দিন ভারতের পাওয়ার কথা। আগামী ৩১ মার্চ বাংলাদেশের প্রাপ্যতা শুরু হবে। সে সময় পানি সরবরাহ বাড়লে পাম্প দুটির পানি সরবরাহ আবার সচল হবে।’

জিকে প্রকল্পের হাইড্রোলজি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গার পানি চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য পানি নিশ্চিত করতে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের প্রতিনিধি দল ফারাক্কা পয়েন্টে এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে। গত জানুয়ারি মাস থেকে দুই দেশের যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রতি ১০ দিন অন্তর পানির পরিমাণ পর্যালোচনা করা হয়।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জানুয়ারিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রায় ৮০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ ছিল। যা চুক্তির চেয়ে ২২ থেকে ২৩ হাজার কিউসেক কম।’

পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ১০ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে এবং অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত। এবং তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ফারাক্কায় পানি প্রবাহ ছিল ৫৯ হাজার ৫২২ কিউসেক এবং বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৩৬ হাজার ৩৯৩ কিউসেক।

কিন্তু ২০ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ভারতের প্রাপ্যতা। ফলে ভারত গঙ্গা থেকে পানির হিস্যা নিয়ে নিচ্ছে। এটি শেষ হবে ৩১ মার্চ।

জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জিকে পাম্পে পানি আনতে পদ্মা নদী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের একটি ইনটেক চ্যানেলের সহায়তা নিতে হয় বলে পানির সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে একটু সমস্যা হয়। পাম্প বন্ধ থাকার বিষয়টি একেবারে সাময়িক। দু-একদিনের মধ্যে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Is human civilisation at an inflection point?

Is human civilisation at an inflection point?

Our brains are being reprogrammed to look for the easiest solutions to our most vexing social and political questions.

8h ago