আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি, তবুও শিথিল বিধিনিষেধ

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে কারফিউ-এর মতো কঠোর নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানিয়েছি।’

স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।

গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশের মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার বৈঠক করেছিলেন এবং সেদিনই তারা চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন।

তারা বলছেন, বিধিনিষেধের নামে যা চলছে তা কেবলই ‘আত্মঘাতী’ এবং স্বাস্থ্য বিভাগ এ ধরণের ধাক্কা সামলাতে পারবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পাঠানো এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ সত্ত্বেও ওইদিন সরকার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শপিংমল এবং দোকানপাট প্রতিদিন আট ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানায়।

একইসঙ্গে সেদিন দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৪ জনের মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি এবং নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলার শর্তে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে, ১৩ এপ্রিলের পরও দোকান ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এ ফয়েজ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, সরকারের সিদ্ধান্তটি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং তা জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকারের উচিত বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করা- যেমন লকডাউনের সময় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা হিসেবে নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তা দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ও বাস্তবসম্মত ছিল না।’

এর আগে ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ১১ দফা নির্দেশনা দেয়, যা সোমবার ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত চালু থাকবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এগুলো লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ত্রাণ বিতরণ, জরুরি ও স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর কার্যক্রম, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবার সঙ্গে জড়িত অফিস, কর্মচারী এবং পরিবহণের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।

ব্যাংকগুলো সকাল দশটা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালু থাকবে এবং সরকারী, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসগুলো তাদের কর্মীদের সীমিত আকারে নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে কর্মস্থলে আনা-নেওয়া করতে পারবে।

শিল্প ইউনিট এবং কারখানার শ্রমিকদের জন্য একই নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে এবং নির্মাণ কাজ যথারীতি চলবে। একুশে বইমেলাও প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।

গত বুধবার দুই দিনের বিরতির পরে সারা দেশের ১১টি শহরের প্রতিটিতেই বাস মালিকরা তাদের সেবা আবারও চালু করে।

কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকালে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়। তবে, রাজধানী শহরের অনেক বাসকে নির্ধারিত সময়সীমার পরেও যাত্রী আনা-নেওয়া করতে দেখা গেছে।

রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল বাদে বুধবার থেকে রাজধানীতে আবারও সব যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।

কয়েকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, সরকারের ১১ দফা নির্দেশনায় বর্ণিত কিছু নিষেধাজ্ঞা যুক্তিসঙ্গত ছিল না এবং কয়েকটি ইস্যু সাংঘর্ষিক ছিল।

তারা আরও জানান, সমন্বয়হীনতা, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে আলোচনায় না আনা এবং সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের জন্য কোনো সহযোগিতামূলক পরিকল্পনার অভাবে নির্দেশনার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

নগরীর বিভিন্ন দোকানের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরের সময়ে সব ব্যবসা, বিশেষ করে পোশাক বিক্রেতাদের বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। সারা বছরের ব্যবসার প্রায় অর্ধেক সাধারণত দেশের প্রধান এই দুই উৎসব চলাকালীন সময়েই হয়ে থাকে।

নিউমার্কেট, গাউসিয়া, গুলিস্তান ও মিরপুরসহ বিভিন্ন মার্কেটের মালিকরা সোমবার আংশিক লকডাউন চালু হওয়ার পরে দোকান ও শপিংমল খোলার দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন।

আরও পড়ুন:

লকডাউনের ঘোষণায় ঢাকার বাস টার্মিনালগুলোতে ভিড়গণপরিবহন বন্ধ, বিকল্প পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া 

রাজশাহীর বেশিরভাগ দোকান খোলা

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের অপেক্ষায় মানুষের ভিড়

বাসে আসন সংকট, অতিরিক্ত ভাড়া সিএনজি-রিকশায়

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের অপেক্ষায় মানুষের ভিড়

৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের লকডাউন

লকডাউনের সময় বাড়ানো নির্ভর করবে সংক্রমণ হারের ওপর: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি

লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশালে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

Comments

The Daily Star  | English

Religious affairs ministry directs DCs to maintain peace, order at mazars

The directive was issued in response to planned attacks on shrines, allegedly aimed at embarrassing the interim government

21m ago