ইয়াস মোকাবিলায় খুলনায় ১০৪৮ আশ্রয়কেন্দ্র, ১১৪ মেডিকেল টিম

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে খুলনা জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

ইতোমধ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় এক হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১৪টি মেডিকেল টিম। প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে বেশি সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ারদার বলেন, ‘গত বছর আম্পানের সময় ৮১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। এ বছর এক হাজার ৪৮ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় পাঁচটি ও প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে মোট ১১৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত রয়েছে।’

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবের এক বছর পূর্তি হল গত বৃহস্পতিবার। আর এখন প্রস্তুতি চলছে আর এক ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলার।’

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসংখ্য মানুষ তাদের বাস্তুভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অঞ্চলের মানুষের দাবি, উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ প্রবণ এলাকা ঘোষণা করে এর উন্নয়নে পৃথক উপকূলীয় বোর্ড গঠন ও আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ।’

তিনি জানান, আম্পানের পর এখনো সুপেয় পানির তীব্র হাহাকার এই অঞ্চলে। বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলেও কয়েকটি স্থানে এখনও জরাজীর্ণ অবস্থা রয়েছে। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানাচ্ছে এলাকাবাসী।

গত বছর ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে সদর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মহারাজপুর ইউনিয়ন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল ৩৮ হাজার, তিন হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, চার হাজার হেক্টর মাছের ঘের ডুবে গেছিল। এর মধ্যে মাত্র ৭০টি পরিবারকে সরকারিভাবে ঘর দেওয়া হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইয়াস এখনও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়নি। এটি গভীর নিম্নচাপে রয়েছে। তবে আজ বিকেল নাগাদ হয়তো ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। বর্তমানে এটি মংলা বন্দর থেকে ৬৯৫, পায়রা বন্দর থেকে ৬৪৫, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭০০ এবং কক্সবাজার থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করবে আগামী ২৬ তারিখ নাগাদ।’

ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলেও আঘাত হানতে পারে। ভরা পূর্ণিমা থাকায় নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে চার থেকে পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেতে পারে। আর তেমনটা হলে প্লাবনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক, চিকিৎসক ও অন্যান্য কার্যক্রম গুছিয়ে রাখা হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

2h ago