যমুনার ভাঙনে দিশেহারা শাহজাদপুরের ৫ ইউনিয়নের মানুষ
গত দুই সপ্তাহে যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে আরও অনেক ফসলি জমি ও বসতবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
শাহজাদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, হঠাৎ করে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার কৈজুরি, জালালপুর, সনাতনী, গালা ও খুকনি ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী ১৩টি গ্রামে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকাগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হলেও কাজ হচ্ছে না।
কৈজুরি গ্রামের বাসিন্দা শওকত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রায় এক দশক আগে যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে তিনি বাস্তুহারা হন। এরপর কৈজুরি ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।
চলতি বছর আবার যমুনা ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। গিলে খাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ নদীর পাড়ের সব স্থাপনা। যে ভাঙন এর মধ্যে পৌঁছে গেছে শওকত আলীর ঘরের দোরগোড়ায়।
আগাম সতর্কতা হিসেবে শওকত এর মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর তৈরি করা একটি ঘর সরিয়ে নিয়েছেন। তবে, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে তার অন্য ঘরটিও যে কোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারে যমুনার গর্ভে।
শওকত জানান, শেষ আশ্রয়টি হারিয়ে গেলে নতুন কোনো ঘর তোলার সামর্থ্য নেই তার।
কেবল শওকত নন, তার মতোই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন শরিফের মোড় এলাকায় আশ্রয় গড়ে তোলা কয়েক শ মানুষ যমুনার ভয়াল ভাঙনে নতুন করে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে পড়েছেন।
ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল ও হাটপাচিল নামের দুটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে কেউ বাঁধের উপর, আবার কেউবা দূরবর্তী কোনো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত তারা সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি। এলাকার হাশমত আলী নামের এক বাসিন্দা যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘আমাদের দুরবস্থা দেখার কেউ নেই।’
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউএনও শামসুজ্জোহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার জন্য ভাঙনে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
শামসুজ্জোহা জানান, শাহজাদপুর এলাকায় যমুনার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে এই অঞ্চলে যমুনার ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
Comments