বেলের সফল পেনাল্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করল ওয়েলস
আট বছর পর বিশ্বকাপে ফিরেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত আসরে খেলার অপেক্ষা ওয়েলসের শেষ হয়েছে ৬৪ বছর পর। ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে প্রত্যাবর্তনে দুই দল উপহার দিল দারুণ ম্যাচ। প্রথমার্ধে দাপট দেখায় যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয়ার্ধে ওয়েলস। জমে ওঠা লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার পর গ্যারেথ বেলের সফল পেনাল্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করল ওয়েলস।
আল রাইয়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে সোমবার রাতে কাতার বিশ্বকাপের 'বি' গ্রুপের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। প্রথমার্ধে টিমোথি উইয়াহর লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। বিরতির পর ম্যাচের শেষদিকে স্পট-কিক থেকে ওয়েলসকে সমতায় ফেরান বেল।
গোটা ম্যাচে বল দখলে প্রাধান্য দেখায় আমেরিকানরা। ৫৯ শতাংশ সময়ে বল ছিল তাদের পায়ে। প্রতিপক্ষের গোলমুখে ছয়টি শট নিয়ে তারা লক্ষ্যে রাখে একটি। অন্যদিকে, আক্রমণে প্রাধান্য দেখায় ওয়েলস। প্রতিপক্ষের গোলমুখে তাদের সাতটি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল তিনটি।
ম্যাচের নবম মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারত যুক্তরাষ্ট্র। ডানপ্রান্ত থেকে উইয়াহর ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালে প্রায় পাঠিয়ে ফেলেছিলেন ওয়েলসের ডিফেন্ডার জো রোডন। তার হেড সতীর্থ গোলরক্ষক ওয়েইন হেনেসি কোনোমতে ফিরিয়ে দেন। কিছুক্ষণের ব্যবধানে ফের হতাশ হতে হয় আমেরিকানদের। অ্যান্টনি রবিনসনের ক্রসে ফরোয়ার্ড জশুয়া সার্জেন্টের প্রচেষ্টা বাধা পায় পোস্টে।
১৫তম মিনিটে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করে ওয়েলস। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মিডফিল্ডার ইথান আমপাডুর দূরপাল্লার শট অবশ্য লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না। ২৯তম মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের সের্জিনো ডেস্ট শট নেন ৩০ গজ দূর থেকে। বার্সেলোনা থেকে বর্তমানে ধারে এসি মিলানে খেলা ডিফেন্ডারের শট ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
চাপ ধরে রেখে সাত মিনিট পর ২২ বছর বয়সী উইয়াহর কল্যাণে কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। মাঝমাঠে সার্জেন্টের কাছ থেকে বল পেয়ে সামনে এগোতে থাকেন ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচ। চেলসির ফরোয়ার্ডের অসাধারণ থ্রু বলে এলোমেলো হয়ে যায় ওয়েলসের রক্ষণভাগ। ডি-বক্সে ঢুকে পড়া উইয়াহকে কেবল পরাস্ত করতে হতো হেনেসিকে। ঠাণ্ডা মাথায় দারুণভাবে বল জালে পাঠিয়ে দলকে উল্লাসে মাতান তিনি।
উইয়াহ লাইবেরিয়ার কিংবদন্তি ফুটবলার জর্জ উইয়াহর ছেলে। সিনিয়র উইয়াহ ১৯৯৫ সালে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি আফ্রিকার প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছিলেন ব্যালন ডি'অর। ২০১৮ সাল থেকে তিনি নিজ দেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। নাগরিকত্ব ও পিতা-মাতার আবাসস্থলের সুবাদে জুনিয়র উইয়াহর লাইবেরিয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জ্যামাইকা ও ফ্রান্সের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার সুযোগ ছিল। তিনি বেছে নেন জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রকেই।
বিরতির পর ম্যাচের চালকের আসনে আসে পরিবর্তন। ওয়েলস মরিয়া হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাতে থাকে, উল্টো লাগাম হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আমেরিকানরা। ৬৪তম মিনিটে সমতা আসতে পারত জমজমাট লড়াইয়ে। তরুণ নিকো উইলিয়ামসের ফ্রি-কিকের পর ডি-বক্সে লস অ্যাঞ্জেলেস এফসির ফরোয়ার্ড বেল খুঁজে নেন বেন ডেভিসকে। তার ডাইভিং হেড অনবদ্য ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক ম্যাট টার্নার।
পরের মিনিটে আবার আক্ষেপে পুড়তে হয় ওয়েলসকে। সতীর্থের কর্নারে বদলি নামা স্ট্রাইকার কিফার মুর মাথা ছোঁয়ালেও বল ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। ৭৭তম মিনিটে পুলিসিচের কর্নারে ব্রেন্ডেন অ্যারনসনের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
চার মিনিট পর পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ১-১ করেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক তারকা বেল। তার বাঁ পায়ের জোরালো শটে হাত ছোঁয়ালেও বলের জালে ঢোকা রুখতে পারেননি টার্নার। ডি-বক্সের ভেতরে বেলই ফাউলের শিকার হওয়ায় রেফারি বাজিয়েছিলেন পেনাল্টির বাঁশি। বিশ্বকাপে ওয়েলসের পক্ষে গোল করা মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হওয়ার নজির গড়েন তিনি।
ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল হয়নি। ফলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই মাঠ ছাড়ে দুই দল। আগামী ২৫ নভেম্বর নিজেদের পরের ম্যাচে ওয়েলস মোকাবিলা করবে ইরানকে, পরদিন ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংলিশরা রয়েছে গ্রুপের শীর্ষে।
Comments