বাইডেনপুত্রের দোষী সাব্যস্তে নির্বাচনে যে প্রভাব পড়তে পারে

বিশ্লেষকরা বলছেন, হান্টার বাইডেনের তিন অভিযোগে দোষী সাব্যস্তের বিষয়টি তার বাবা জো বাইডেনের প্রচারণায় বা ভোটারদের মনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় মাদকাসক্তি নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনি সর্বোচ্চ ২৫ বছর কারাদণ্ড পেতে পারেন। এই ঘটনায় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে কী না, সেটা নিয়ে ইতোমধ্যে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে।

আজ ওয়াশিংটন পোস্ট, ফোর্বস, ফক্স নিউজ সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হান্টার বাইডেন দোষী সাব্যস্তের ঘটনায় মার্কিন নির্বাচনের ওপর প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষকদের মন্তব্য জানানো হয়েছে।

বেশিরভাগ বিশ্লেষক বলছেন, এ ঘটনায় নির্বাচনের ওপর প্রভাব পড়লেও তা হবে খুবই সামান্য। জো বাইডেন কিছু ভোট হারাতে পারেন, তবে এ সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্য হবে না বা নির্বাচনের ফলকে খুব একটা প্রভাবিত করবে না।

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন। দুটি ঘটনাই নজিরবিহীন

ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৪টি ফৌজদারি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বা নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হান্টার বাইডেনের তিন অভিযোগে দোষী সাব্যস্তের বিষয়টি তার বাবা জো বাইডেনের প্রচারণায় বা ভোটারদের মনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।

ছেলের অপরাধের সঙ্গে বাইডেনের যোগসূত্র

দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প ও বাইডেন। ফাইল ছবি/কোলাজ: রয়টার্স
দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প ও বাইডেন। ফাইল ছবি/কোলাজ: রয়টার্স

রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা বেশ কিছুদিন ধরেই বাইডেনপুত্রের নানা সমস্যার সঙ্গে তার বাবাকে জড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

এখানে উল্লেখ্য, হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি অভিযোগের সঙ্গে তার বাবার কোনো যোগসূত্র নেই বললেই চলে। রিপাবলিকানরা হান্টারের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সমালোচনা করে এর সঙ্গে জো বাইডেনকে জড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু হান্টারের বিরুদ্ধে আনা তিন অভিযোগের সঙ্গে তার ব্যবসারও কোনো সম্পর্ক নেই।

বাইডেন–পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ সালে উইলমিংটনের আগ্নেয়াস্ত্রের একটি দোকান থেকে তিনি একটি রিভলবার কিনেছিলেন। আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার সময় তিনি নিজের মাদকাসক্তি নিয়ে ফেডারেল কাগজপত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। নিজের মাদকাসক্তির কথা গোপন করেছিলেন তিনি। এ ঘটনায় হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা।

কাগজেকলমে বলা যায়, ভোটাররা হান্টারের বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগের আলোকে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে দেখতে শুরু করতে পারে এবং সে অনুযায়ী তাদের ভোটের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের কিছু ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।

মার্কিনীরা এরকম ঘটনার প্রেক্ষিতে রাতারাতি তাদের সিদ্ধান্ত বদলেছেন—এরকম নজির নেই বললেই চলে।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ

স্ত্রীর সঙ্গে হান্টার বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

ফেব্রুয়ারিতে রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে দেখা যায়, ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ মার্কিনী হান্টার বাইডেনের আইনি সমস্যাগুলোকে 'আলাদা ঘটনা ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বাবার কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়' বলে অভিহিত করেন।

শুধু ২২ শতাংশ নিরপেক্ষ ভোটার এর বিরুদ্ধাচরণ করেন এবং জানান, হান্টার বাইডেনের এসব কীর্তি বিবেচনায় নিয়ে তারা জো বাইডেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

একই জরিপে দেখা গেছে, ২৩ শতাংশ মার্কিন ভোটার বলেছেন, হান্টার বাইডেনের আইনি সমস্যার কারণে তারা খুব সম্ভবত জো বাইডেনকে ভোট দেবেন না।

তবে এসব ফলাফল নিয়েও আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

জরিপ জানাচ্ছে, যারা এই বিকল্প বেছে নিয়েছেন (বাইডেনকে ভোট দেবেন না), তাদের বেশিরভাগই রিপাবলিকান ঘেঁষা এবং তারা এমনিতেও বাইডেনকে ভোট দিতেন না।

২৫ শতাংশ নিরপেক্ষ ভোটার বলেছেন, বাইডেনপুত্রের আইনি সমস্যার কারণে তারা খুব সম্ভবত প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সমর্থন জানাবেন না এবং ১৯ শতাংশ জানিয়েছেন, একই কারণে বাইডেনকে সমর্থন জানানোর সম্ভাবনা 'অনেক কম'।

এখানে আরেকটি উল্লেখ্য বিষয় হল, শুধু এই অস্ত্র-মাদক মামলা নয়, হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগের বিষয়গুলোও জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাথায় ছিল।

রিপাবলিকানরা হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জেরে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, যা ব্যর্থ হয়।

গত বছর ফক্স নিউজের এক জরিপ মতে, অর্ধেকেরও বেশি মার্কিন নাগরিক বিশ্বাস করেন হান্টার বাইডেনের বৈদেশিক ব্যবসাগুলো অবৈধ। কিন্তু একই জরিপে দেখা যায়, ৪০ শতাংশের কম মানুষ বিশ্বাস করেন বাইডেনপুত্রের অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে তার বাবার যোগসূত্র রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মত, ইতোমধ্যে যারা বাইডেনের বিরোধিতা করছেন, তারাই মূলত এ ধরনের মনোভাব পোষণ করেন। এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নিরপেক্ষ ও ২৯ শতাংশ মধ্যপন্থী ভোটার মত দেন, জো বাইডেন তার ছেলের সূত্রে অবৈধ কাজে জড়িয়েছেন।

'আইনের চোখে সবাই সমান'

লাস ভেগাসে নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
লাস ভেগাসে নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

হান্টার বাইডেন দোষী সাব্যস্ত হওয়াকে ইতিবাচকভাবে প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। 'আইনের চোখে সবাই সমান', 'বাইডেনপুত্রকেও ছাড় দেয়নি শক্তিশালী মার্কিন বিচারব্যবস্থা'—এ ধরনের কথা বলে বরং বাইডেনের শাসনামলে আইনি প্রক্রিয়ার বলিষ্ঠতা প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর বব মেনেন্দেজ ও টেক্সাসে দলটির প্রতিনিধি হেনরি কেলারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার জো বাইডেন ও অন্যান্য ডেমোক্র্যাট নেতারা আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।

অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন।

মূলত ট্রাম্প বলতে চাইছেন, তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্টের আইনি ব্যবস্থার 'অস্ত্রীকরণ' করা হয়েছে এবং তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

পাশাপাশি, মঙ্গলবার রিপাবলিকানরা হান্টার বাইডেনকে দোষী সাব্যস্তের ঘটনার প্রশংসা না করে বরং বলেছেন, এটা তার আসল অপরাধ ঢাকার জন্য একটি অজুহাত। তাদের দাবি, হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ আছে, যেমন অনিবন্ধিত বিদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করা, বিদেশে অবৈধভাবে ব্যবসা করা। সেসব অপরাধ নিয়ে আদালত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এমন বলছেন ট্রাম্পের দলের নেতা-কর্মীরা।

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, 'বাইডেন পরিবারের আসল অপরাধ থেকে মানুষের মনোযোগ সরানোর জন্য এই (হান্টারের) বিচারিক প্রক্রিয়াকে কাজে লাগানো হয়েছে। এই অপরাধী পরিবারটি চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে লাখো ডলার হাতিয়ে নিয়েছে'।

আদালতে হাজির হওয়ার আগে হান্টার বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
আদালতে হাজির হওয়ার আগে হান্টার বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

তবে অনেকেই সাম্প্রতিক ঘটনার বিচারে ট্রাম্পের দাবি উপেক্ষা করতে পারেন। বিশ্লেষকদের মতে, কট্টর ট্রাম্প সমর্থক ছাড়া কেউই 'আইনের অস্ত্রীকরণ' যুক্তির সঙ্গে একমত নন।

ফেব্রুয়ারিতে রয়টার্সের জরিপে দেখা গিয়েছিল ৫৯ শতাংশ মার্কিনী ভাবছেন (যাদের ৩২ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থক) হান্টার বাইডেনকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে মার্কিন কৌঁসুলিরা।

তবে হান্টার দোষী সাব্যস্ত হওয়া তাদের মনোভাব বদলাতে পারে।

তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে বিচারিক কার্যক্রম সেপ্টেম্বরে শুরু হবে। তবে এ ঘটনাতেও ভোটাররা প্রভাবিত হবে না বলেই মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সব মিলিয়ে বলা যায়, হান্টার বাইডেনের আইনি সমস্যা তার বাবার নির্বাচনী প্রচারণায় উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। 

Comments

The Daily Star  | English

Economy in FY25: Is there any light at the end of the tunnel?

There is hope that the major challenges Bangladesh is facing due to high inflation and the foreign reserve crisis will stabilise gradually in fiscal year 2024-25, but consistency in maintaining a strict policy stance will be imperative to that end.

15h ago