হামাস মেনে নিলে ইসরায়েলও বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেবে: যুক্তরাষ্ট্র

প্রায় ৯ মাসের সংঘাতে গাজা এখন কার্যত ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। ছবি: এএফপি
প্রায় ৯ মাসের সংঘাতে গাজা এখন কার্যত ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র মত দিয়েছে, হামাস এই প্রস্তাবে উল্লেখিত শর্তগুলো মেনে নিলে ইসরায়েলও তা মেনে নিতে পারে।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স ও ডয়চে ভেলে।

শুক্রবার একটি যুদ্ধ বিরতির খসড়া প্রস্তাবটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে হোয়াইট হাউস সূত্র জানিয়েছে।

শনি ও রোববার সেই প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের সঙ্গে আলোচনা করেছে মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে বাইডেনের প্রস্তাবটি ইসরায়েলের অনুকূলে। যার ফলে ইসরায়েলের এই প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়। যদিও ইসরায়েল জানিয়েছে, প্রস্তাবের কয়েকটি শর্ত নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। কিন্তু হোয়াইট হাউস মনে করছে, হামাস এই শর্ত মেনে নিলে ইসরায়েলও তাতে সম্মত হবে।'

এর আগে মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে গত নভেম্বর মাসে সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল ইসরায়েল ও হামাস। সে সময় বেশ কিছু বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস, পরিবর্তে ইসরায়েল মুক্তি দিয়েছিল দেশটির কারাগারে আটক থাকা বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে। এরপর বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও তা সার্থক হয়নি।

তবে এবারের প্রস্তাব নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

নতুন প্রস্তাবে তিনটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। প্রথম ধাপে বলা হয়েছে, ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের সেনা গাজার সমস্ত জনবহুল অঞ্চল থেকে সরে যাবে। ওই সময়ের মধ্যেই হামাস ৭ অক্টোবরের হামলায় আটক করা আরো কিছু বন্দিকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি ইসরায়েলকেও আরো কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপে সমস্ত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। অপরদিকে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নেবে।

তৃতীয় ধাপে গাজায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি ঘরের সংস্কারকাজ শুরু হবে। দুর্গত মানুষের কাছে আরো বেশি করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

বাইডেন বলেছেন, এই প্রস্তাবে সব ধরনের আলোচনার পথ খোলা আছে।

দুই পক্ষ সব শর্ত মেনে নিলে দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব বলেই বাইডেন মনে করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, হামাস এই শর্ত মেনে নিলে ইসরায়েলও সম্মতি জানাবে।

বিষয়টি নিয়ে সপ্তাহান্তে দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা চালিয়েছে মধ্যস্থতাকারীরা।

ইসরায়েলের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবে যে শর্তগুলি আছে, তার অনেককিছুই ইসরায়েলের পছন্দ নয়। কিন্তু তারপরেও ইসরায়েল এই প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত কারণ, তারা দ্রুত বন্দিদের মুক্তি চায়।

অপরদিকে, রোববার রাতভর হামলার পর সোমবার সকালেও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল।

মধ্যস্থতাকারীরা উভয় পক্ষকে বাইডেনের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফাইল ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফাইল ছবি: এএফপি

বাইডেনের বক্তব্যের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, হামাসকে নির্মূল না করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা না আনা পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।

হামাস জানিয়েছে, তারা বাইডেনের প্রস্তাবকে 'অত্যন্ত ইতিবাচক' মনে করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে ফোন করে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে রোববার রাতে দুইটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

ফোন কলে ব্লিঙ্কেন উভয়কে এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার 'সুপারিশ' করেন এবং জানান, 'হামাস কোনো বিলম্ব ছাড়াই এতে সম্মতি দেবে'।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এএফপির সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, এই হামলায় এক হাজার ১৮৯ জন নিহত হন। একইসঙ্গে ২৫২ জনকে জিম্মি করে হামাস। জিম্মিদের মধ্যে ১২১ জন এখনো গাজায় আছেন। ইসরায়েলের দাবি, ৩৭ জিম্মি নিহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৬ হাজার ৪৩৯ ছাড়িয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

NBR plans to roll back tax benefits for exporters

The prospect of reduced tax benefits has rattled exporters, already wrestling with shifting global trade dynamics, including fresh US tariffs

11h ago