বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে ‘ইতিবাচক’ বিবেচনা করছে হামাস

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার মুখে গাজার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্প থেকে সরে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: ৩১ মে, ২০২৪। রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে 'ইতিবাচক' বিবেচনা করছে হামাস।

আজ শনিবার এএফপি জানায়, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বান জানানোর পর গতকাল সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়েছে হামাস।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং এ উপত্যকার পুনর্গঠন ও বন্দী বিনিময়' নিয়ে বাইডেনের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছে তারা।

ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কথা ঘোষণাকালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি টানার আহ্বান জানান। তবে দ্রুতই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাইডেনের শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বানে নেতিবাচক মনোভাব দেখান। জোর দিয়ে তিনি বলেন, হামাসের গাজা শাসন করা ও ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠার ক্ষমতা নিঃশেষ না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফা শহরে অভিযান না চালাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে গতকাল ইসরায়েলের ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘোষণা করলেন বাইডেন।

স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এ আহ্বান জানান বাইডেন।

তিনি বলেছেন, 'এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে'।

তিন পর্যায়ের নতুন এই প্রস্তাবে গাজায় পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে হামাসের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, 'হামাস সবসময় বলে থাকে, তারা যুদ্ধবিরতি চায়। এখন হামাসের সামনে প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে যে, তারা আসলেই এটা চায় কি না'।

বিবিসি জানায়, বাইডেনের প্রস্তাবটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। এ সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তুলে নেওয়া হবে।

যুদ্ধবিরতির সময় হামাস 'নির্দিষ্ট সংখ্যক' জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং আহত জিম্মিরা থাকবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি থাকা কয়েকশ মানুষকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি অভস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে।

গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘরে ফিরতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। গাজায় প্রতিদিন মানবিক সহায়তাবাহী ৬০০ ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে।

ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্ততায় শান্তি আলোচনা চলমান থাকবে। যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে বাদবাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। তাদের মধ্যে জিম্মি পুরুষ সেনারাও থাকবেন। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকে 'স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে'  উন্নীত করা হবে।

তৃতীয় পর্যায়ে জিম্মি ফেরানোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করা হবে। গাজার জন্য বড় ধরণের একটি 'পুনর্গঠন পরিকল্পনা' বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এর আওতায় মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে।

হামাসের প্রতি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া ও গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বেয়ারবক।

অন্যদিকে জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেসও 'দৃঢ়ভাবে আশা করেন' সর্বশেষ প্রস্তাবটি 'স্থায়ী শান্তির জন্য উভয়পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তির পথে' যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Israel launches major attack on Iran: what we know so far

‘Nuclear plant, military sites’ hit; strikes likely killed Iranian chief of staff, top nuclear scientists; state of emergency declared in Israel, fearing Iranian retaliation

2h ago