‘ধন্যবাদ সাংবাদিকতা’ ও মুক্ত গণমাধ্যমের সূচক বিতর্ক

নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করতেন এমন ২ জনের ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেওয়া হয়েছে। যেখানে একজন (চ্যালেঞ্জার) জিজ্ঞেস করছেন, ‘ঠিকমতো সাংবাদিকতা করো না কেন?’ জবাবে অন্যজন (ফারুক আহমেদ) বলছেন, ‘ধন্যবাদ দিয়াই কুল পাই না, সাংবাদিকতা করব কখন?’

নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করতেন এমন ২ জনের ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেওয়া হয়েছে। যেখানে একজন (চ্যালেঞ্জার) জিজ্ঞেস করছেন, 'ঠিকমতো সাংবাদিকতা করো না কেন?' জবাবে অন্যজন (ফারুক আহমেদ) বলছেন, 'ধন্যবাদ দিয়াই কুল পাই না, সাংবাদিকতা করব কখন?'

সাংবাদিকতার মতো একটি সিরিয়াস বিষয়ও যে এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রসিকতার বস্তুতে পরিণত হলো, সেটি খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তার আগে সাম্প্রতিক একটি সংবাদের দিকে চোখ বুলানো যাক, যেখানে বলা হয়েছে, 'মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আরও পেছালো বাংলাদেশ'।

খবরে বলা হয়, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১০ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) করা সূচকে বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২তম অবস্থানে রয়েছে। গত বছর যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম। সে হিসেবে এবার এক বছরেই বাংলাদেশ পিছিয়েছে ১০ ধাপ।

সূচক অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ভারত (১৫০), পাকিস্তান (১৫৭), শ্রীলঙ্কা (১৪৬), আফগানিস্তান (১৫৬), নেপাল (৭৬), মালদ্বীপ (৮৭) এবং ভুটান (৩৩)। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থানও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো।

যদিও মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের এই অবনমনের সংবাদের সঙ্গে একমত নন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গত ৫ মে দুপুরে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এই রিপোর্টকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই রিপোর্ট বিদ্বেষমূলক, আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য। তার ভাষায়, বিদেশে বসে যারা বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালায়, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, তারা অসৎ উদ্দেশ্যে রিপোর্ট তৈরি করে থাকে।

মুশকিল হলো, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মন্ত্রী, এমপি এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও মনে করেন, সাংবাদিকরা কেবল তাদের প্রশংসাই করবেন। শুধু ভালো কথাগুলোই লিখবেন। কেবল ইতিবাচক বিষয়গুলোই তুলে ধরবেন। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের ফলে মানুষের জীবনমানে কী পরিবর্তন এলো বা আসবে, সেগুলো তুলে ধরবেন। কিন্তু ওই উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যে হাজারো কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল—সর্বত্র যে ভয়াবহ দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু লেখা যাবে না। কিন্তু তারা বুঝতে চান না বা বুঝলেও না বোঝার ভান করেন যে, ভালো কাজ করাই তাদের দায়িত্ব এবং এ কারণেই তাদের বেতন দেওয়া হয়। সুতরাং তারা যখনই কাজে বিচ্যুতি করবেন, উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা মারবেন, দুর্নীতি করবেন, গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেবেন—সেগুলোই হচ্ছে সংবাদ। যে কারণে বলা হয় 'ব্যাড নিউজ ইজ গুড নিউজ'।

একজন রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মচারী কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার—অর্থাৎ যাদের কাজের সঙ্গে জনগণের অর্থের সম্পর্ক রয়েছে, তারা ন্যূনতম অপরাধ বা দুর্নীতি করলেও সেটি সংবাদ এবং মানুষ সেই সংবাদটি জানতে চায়।

একজন সরকারি কর্মকর্তা ঠিকমতো কাজ করবেন, ঘুষ খাবেন না, মানুষকে বিনা হয়রানিতে ও বিনা ঘুষে কাজটি করে দেবেন, এটিই স্বাভাবিক। এর জন্য তাকে মৌখিকভাবে ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু তিনি ঘুষ খান না বা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন, এটি নিশ্চয়ই সংবাদ নয়। সংবাদ তখনই হবে যখন তিনি কাজটি ঠিকমতো করবেন না।

ঠিকাদার রাস্তা বা সেতু নির্মাণে ঠিকমতো ইট-রড-বালু-সিমেন্ট দেবেন, এটিই স্বাভাবিক। এটি কোনো সংবাদের বিষয় নয়। কিন্তু তিনি যদি অবকাঠামো নির্মাণে ত্রুটি করেন, ঠিকমতো মালামাল না দেন, সেটিই সংবাদ। সেটি বের করে আনাই সাংবাদিকের কাজ এবং জনগণও এটি জানতে চায় যে রাস্তার কাজ ঠিকমতো হলো কি না? অতএব ঠিকাদার ঠিকমতো রাস্তার কাজ করেছেন বলে তাকে মৌখিকভাবে ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তাকে ধন্যবাদ দিয়ে পত্রিকায় সম্পাদকীয় ছাপতে হবে।

অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সরকারি হাসপাতালের পরিচালক, জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি এমনকি তৃণমূলের নেতাকর্মী—সকলেরই একই অভিযোগ, সাংবাদিকরা শুধু খারাপ খবর ছাপে বা তারা শুধু খারাপ সংবাদ খোঁজে। কিন্তু তারা বোঝেন না, এটিই সাংবাদিকের কাজ। যে কারণে বলা হয়, 'ফলো দ্য মানি'। অর্থাৎ যেখানে অর্থ, সেখানেই দুর্নীতি থাকতে পারে, অতএব ওই অর্থের উৎস এবং তা কোথায় খরচ হচ্ছে, সেটির নির্মোহ অনুসন্ধানই গণমাধ্যমের কাজ।

জনগণের কর্মচারী এবং জনপ্রতিনিধিরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, কোথায় কোথায় বিচ্যুতি, সেগুলো খুঁজে বের করে মানুষকে জানানোই গণমাধ্যমের দায়িত্ব। ধন্যবাদ দেওয়া সাংবাদিকের কাজ নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে যেভাবে 'ধন্যবাদ সংস্কৃতি' গড়ে উঠেছে, গণমাধ্যমের কাছ থেকেও সেরকম ধন্যবাদ সাংবাদিকতা প্রত্যাশা করা ভুল। যারা করছে, তারা গণমাধ্যম থাকছে না। প্রচারমাধ্যমে পরিণত হচ্ছে। গণমাধ্যম আর প্রচারমাধ্যম এক নয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে কতটি সত্যিই গণমাধ্যম আর কতটি প্রচারমাধ্যম, তার নির্মোহ বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি।

২.

'ট্র্যাজেডির নায়ক' বলে কোনো শব্দ থাকলে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এবং সবচেয়ে অনিশ্চিত পেশা বলতে যদি কিছু থাকে, সেটিও সাংবাদিকতা। কারণ সকল পেশার মানুষের অধিকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার সাংবাদিকরা। অথচ অধিকাংশ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিয়মিত বেতন পান না। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বেতন দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই বেতনের বাইরে আর কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। বছরের পর বছর একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পরে যখন তিনি পেশা ছেড়ে দেন বা প্রতিষ্ঠান বদল করেন, তখন অনেকটা শূন্য হাতে চলে যান।

বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও উৎসব ভাতা নিয়েও সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেন। অথচ সাংবাদিক নিজেই উৎসব ভাতা পান না (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেনশন নিয়ে বিড়ম্বনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মাঠ-ঘাট চষে বেড়ান যে সাংবাদিক, তার নিজেরই কোনো পেনশন নেই, অবসর ভাতা নেই। এমনকি তার পেশাগত নিরাপত্তাটুকুও নেই। মুখের কথায় চাকরি চলে যায়। কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে সংবাদ প্রকাশ করলে তার চাকরি চলে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় জীবনও বিপন্ন হয়। আবার প্রতিষ্ঠানের ভেতরেও তার শান্তি নেই। তার পদোন্নতির কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নেই। এতসব 'নেই'-এর ভেতরে কাজ করেন যে জনগোষ্ঠীর মানুষ, সেই গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিকরাই অন্য সবার মানবাধিকার, অন্য সবার ভালো থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এরচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি কী হতে পারে?

সুতরাং, যে দেশে সাংবাদিকদের নিজের কোনো পেশাগত নিরাপত্তা নেই, যে দেশে সাংবাদিকতা এখনও একটি পেশা হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি, যে দেশের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোয় পেশাদারিত্বের কোনো চর্চা নেই, সেই দেশের গণমাধ্যম মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে খুব উপরের দিকে থাকবে, সেটি ভাবার কোনো কারণ নেই।

৩.

মুক্ত গণমাধ্যমের পথে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি এখন আর ডিজিটাল নিরাপত্তা নয়, বরং গণমাধ্যমকর্মী নিয়ন্ত্রণ আইনে পরিণত হয়েছে। দেশের আর কোনো আইন নিয়ে এত সমালোচনা হয়নি, যা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে। কিন্তু তারপরও এই আইনটি বাতিল হয়নি। বরং সরকারের তরফে বারবারই বলা হচ্ছে যে, এই আইন সঠিক এবং এই আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হবে না। ২০১৮ সালে যখন এই আইনটি পাস হয়, তখন সরকারের তরফে বার বার বলা হয়েছিল যে, আইনটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই আইনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক পোস্ট এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই।

আইনটি প্রণয়নের সময়ই সাংবাদিক সমাজের তরফে এর বেশ কয়েকটি ধারার বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানানো হয়। তখন আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী বারবার এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এ আইন করা হচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ায় নাগরিকের নিরাপত্তার স্বার্থে। কোনোভাবেই এটি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার জন্য নয়। অথচ এই আইনে এ পর্যন্ত যতগুলো মামলা হয়েছে, তার একটি বড় অংশেরই আসামি সাংবাদিক এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সংবাদ প্রকাশ এবং সেই সংবাদ ডিজিটাল প্লাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির কথিত মানহানির অভিযোগে। অনেক ক্ষেত্রেই মামলা করেছেন তৃতীয়পক্ষ। অর্থাৎ যার মানহানি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, তার পক্ষে অন্য কেউ মামলা করেছেন।

ডিজিটাল প্লাটফর্মে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলে এই আইনটি প্রণয়ন করা হলেও বস্তুত এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ডিজিটাল প্লাটফর্মে সব ধরনের ভিন্নমত দমন করা—সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই হোক, আর গণমাধ্যমই হোক।

দেশে 'ধন্যবাদ সাংবাদিকতা' বাড়ার এটিও একটি কারণ। কারণ যারা ধন্যবাদ সাংবাদিকতা করেন, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম এবং তারা নানা জায়গা থেকে বিবিধ সুবিধাও নিয়ে থাকেন। কিন্তু এর বাইরে যারা সত্যিকারের সাংবাদিকতা করেন বা করতে চান, তাদের বিপদ পায়ে পায়ে। তারা একদিকে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে চাপে থাকেন, অন্যদিকে তাদেরকে চিহ্নিত করা হয় উন্নয়নবিরোধী বা সরকারবিরোধী সাংবাদিক হিসেবে। এই চিহ্নিত হওয়ার ভয়েও অনেকে হয় চুপ থাকেন কিংবা 'ধন্যবাদ সাংবাদিকতা' শুরু করেন।

সবারই পরিবার আছে। দিন শেষে প্রত্যেককে তার পরিবারের কাছে ফিরতে হয়। পরিবারের সদস্যদের জন্য বাজার করতে হয়। মাস শেষে ঘরভাড়া দিতে হয়। সুতরাং স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে পেশাদারিত্ব বিকাশের চেষ্টা করেও আখেরে কোনো লাভ হয় না। চাকরি চলে গেলে আরেকটা চাকরি জোগাড় করা বেশ কঠিন। বিশেষ করে সাংবাদিকরা সিনিয়র হয়ে গেলে, বয়স বেড়ে গেলে, বেতন বেড়ে গেলে তাদের চাকরির বাজার সংকুচিত হতে থাকে। উন্নত বিশ্বে যেখানে সাংবাদিকদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা বাড়ে, বাংলাদেশে হয় তার উল্টো। এখানে বয়স ও পদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার চাকরির বাজার ছোট হয় এবং তার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। সুতরাং এরকম একটি দেশের সাংবাদিকতা মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে নরওয়ে-ফিনল্যান্ডের কাতারে থাকবে, সেটি ভাবার কোনো কারণ নেই।

অতএব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কত নম্বরে, সেটি নিয়ে তর্ক না করে কীভাবে দেশের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোয় পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা যায়, সাংবাদিকতাকে একটি পরিপূর্ণ পেশা হিসেবে দাঁড় করানো যায়, কীভাবে সকল প্রতিষ্ঠানে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়িটিসহ অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, তাদের জন্য একটি পেনশন বা অবসর ভাতার ব্যবস্থা করা যায় এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতার নামে আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকা, ভুঁইফোঁড় অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, অনিবন্ধিত আইপি টিভি ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে যারা সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, সাংবাদিকতার মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশাকে মানুষের সামনে হাস্যরসের খোরাকে পরিণত করছে, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে গণমাধ্যমকে গুলিয়ে ফেলছে—তাদেরও প্রতিহত করা দরকার।

প্রশ্ন হলো, এই কাজগুলো কে করবেন? করতে হবে পেশাদার সাংবাদিকদেরই। অন্তত শুরুটা করা দরকার, যাতে ২০ বছর পরে হলেও দেশের সাংবাদিকতা সত্যিই একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে পারে। কারণ সাংবাদিকের নিজের পেশাগত নিরাপত্তা না থাকলে, তার আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকলে তার পক্ষে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহ সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়। তাকে যদি সব সময় ভয় ও অনিশ্চয়তা তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে, তাহলে তার পক্ষে আর যাই হোক সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়। তখন টিকে থাকার জন্য তাকে 'ধন্যবাদ সাংবাদিকতারই' আশ্রয় নিতে হবে—যা তাকে ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন করে দেবে। আর গণমাধ্যম যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে তাকে আর গণমাধ্যম বলা যাবে না। সেটি বড়জোর সরকার কিংবা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রচারমাধ্যম বলা যেতে পারে।

আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu agrees to Gaza ceasefire talks

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu has agreed to send delegations to Egypt and Qatar, where negotiators have been trying to secure the release of Israeli hostages as part of a possible Gaza ceasefire deal, his office said on Friday

14m ago