উন্নত জীবনের দাবিদার পুলিশ কনস্টেবল

অনেকের কাছেই কনস্টেবল শব্দটি শুনলেই পুলিশ বাহিনীর এমন এক সদস্যের কথা ভেসে ওঠে যিনি লাঠি হাতে তেড়ে যাচ্ছেন নিরীহ পথচারীর দিকে, অকারণে রিকশাচালক কিংবা আরোহীদের হেনস্তা করছেন অথবা কোনো মানুষের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে তার কাছ থেকে ঘুষ আদায় করছেন। মোটামুটি স্থায়ী হয়ে যাওয়া এই ভাবমূর্তি, আসলে পুরো চিত্র নয়।

অনেকের কাছেই কনস্টেবল শব্দটি শুনলেই পুলিশ বাহিনীর এমন এক সদস্যের কথা ভেসে ওঠে যিনি লাঠি হাতে তেড়ে যাচ্ছেন নিরীহ পথচারীর দিকে, অকারণে রিকশাচালক কিংবা আরোহীদের হেনস্তা করছেন অথবা কোনো মানুষের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে তার কাছ থেকে ঘুষ আদায় করছেন। মোটামুটি স্থায়ী হয়ে যাওয়া এই ভাবমূর্তি, আসলে পুরো চিত্র নয়। তারপরেও এই ভাবমূর্তি প্রায়ই ছাপার অযোগ্য বিশেষণ সহযোগে আমাদের সামনে আসে, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একজন কনস্টেবল তার দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে শুধু পথেই নয়, অন্য আরও অনেক জায়গা থেকেও সমস্যার মুখোমুখি হন। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে তারা কেমন জীবনযাপন করেন, তা আমরা বোঝার কোনো চেষ্টাই করি না। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থেকে, দীর্ঘ সময় ধরে তারা প্রতিদিন দায়িত্বের প্রতি সাড়া দিয়ে যাচ্ছেন। ছুটির আনন্দ উপভোগ করতে করতে আমরা কী কখনো সেসব কনস্টেবলদের কথা ভেবেছি, যারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পথেঘাটে দাঁড়িয়ে আছেন?

একজন কনস্টেবল পুলিশ বাহিনীতে পদমর্যাদায় সবচেয়ে নিচের সারিতে অবস্থান করেন। তাকে সপ্তাহের ৭ দিন এবং দিনের ২৪ ঘণ্টাই জরুরি ডাকের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়। দেশে পুলিশের সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ হয়েছে। বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যই কনস্টেবল পদে আছেন। কিন্তু তারপরও, সাধারণ জনগণ বনাম পুলিশের অনুপাত (প্রতি ৮১৬ জন নাগরিকের বিপরীতে ১ জন পুলিশ) জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্ধারিত মানদণ্ডের তুলনায় খুবই কম। এ কারণে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিরতিহীনভাবে তাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন যা তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত করে তুলছে।

এই পত্রিকার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন কনস্টেবলকে দিনে ১১ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। অন্যান্য আনুষঙ্গিক দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা বিবেচনায় তারা পরের দিনের কাজ শুরু করার আগে একটি পুরো রাতের বিশ্রামও পান না। এছাড়াও, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের সামান্য বেতন ও ভাতা পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয়। একারণে, তাদের অনেকেই সব দিক সামলাতে অসাধু পন্থা অবলম্বন করেন। প্রতিবেদন থেকে এটুকু পরিষ্কার, অনেক নবনিযুক্ত কনস্টেবল তাদের দায়িত্ব সম্পর্ক সঠিক ধারণা না নিয়েই এই পেশায় এসেছেন। উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে কাজ করার পরিবর্তে তারা দায়সারাভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, তারা কাজ থেকে রেহাই পেয়ে ছুটিতে যাওয়ার সুযোগও পান না বললেই চলে। ফলে তাদের ওপর বড় ধরনের চাপের সৃষ্টি হয়, যে চাপ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না এবং সমাধান হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

আমরা মনে করি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্বের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করা দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে সবাইকে উপযোগিতার সঙ্গে কাজ দেওয়া হচ্ছে। হাতে থাকা মানবসম্পদ বিবেচনায় কোনো ব্যক্তির ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ না দিয়ে দায়িত্ব সম্পাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিরতি ছাড়া কোনো ব্যক্তির পক্ষে বছরজুড়ে সপ্তাহে ৭ দিন ও দিনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো, ছুটি দিতেই হবে এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজন কার্যকর মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা। অবসাদের ভারে আক্রান্ত দেহ ও মন, কোনোটাই কার্যকর হতে পারে না এবং এক্ষেত্রে ভুল করার সম্ভাবনাও অনেকাংশে বেড়ে যায় এবং এটি যদি একজন পুলিশের ক্ষেত্রে হয়, তাহলে সেটি আরও অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে পারে—তার নিজের জন্য এবং জনগণের জন্যও।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Taka to trade more freely by next month

Bangladesh will introduce a crawling peg system by next month to make the exchange rate more flexible and improve the foreign currency reserves, a key prescription from the International Monetary Fund.

4h ago