আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ভোগান্তি থেকে ভোক্তাদের বাঁচান

পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্রথাগত বাণিজ্য দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে ই-কমার্সে রূপ নিচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন আসছে ভোক্তাদের আচরণে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভোক্তারা এর যথাযথ সুবিধা নিতে পারছেন না।
ক্রমবর্ধমান এই খাতে নিয়মিতই আর্থিক কেলেঙ্কারি, ব্যবসায়িক কারসাজি এবং ভোগান্তির খবর আসছে। এর কারণ হচ্ছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।
এ বছরের বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের মূল প্রতিপাদ্য 'ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থায় ন্যায্যতা'। প্রতিপাদ্যটিতে ভোক্তাদের জন্য সরকারের নীতিতে এ পরিবর্তিত পদ্ধতিতে ন্যায্য লেনদেন এবং যথাযথ ব্যবসায়িক আচরণের আহ্বান প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকেই নীতিগত সংস্কার না করায় এ খাতে যে পরিমাণ অনৈতিক চর্চা হয়েছে এবং তার বিস্তার যে কতটা বেশি ছিল তা উঠে এসেছে দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটিতে ই-কমার্স কেলেঙ্কারির শিকার ভোক্তাদের ভাগ্যের নির্মম চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। ই-কমার্সে পণ্য কেনাবেচায় বিনিয়োগ করা অনেকেই বলছেন, তাদের হয়তো সে অর্থ ফেরত পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। ইঅরেঞ্জ, ইভ্যালি, সিরাজগঞ্জ শপ, ধামাকা শপিং, ২৪ টিকেটি, আলেশা মার্ট, প্রিয় শপ ডট কম, কিউকমের মতো বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পঞ্জি স্কিমের ব্যবসায়িক মডেল ব্যবহার করে গ্রাহকদের যেভাবে প্রতারিত করেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এসব প্রতিষ্ঠানের হাজারো কোটি টাকা দায় রয়ে গেছে বাজারে এবং গ্রাহকদের কাছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ অমীমাংসিত রয়ে গেছে। কিছু বকেয়া টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু মূলত বিনা পুঁজিতে চলছিল, তাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে এসব দায় মেটানো প্রায় অসম্ভব।
প্রতারিত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নেই বললেই চলে কিংবা তাদের হয়তো সেই স্বদিচ্ছাটাও নেই। এতে গ্রাহকদের এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে, তারও কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া সম্ভব নয়।
এ খাতের প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে ন্যায্য ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থার আহ্বানের কোনো মিলই নেই। তবে এটাও সত্য যে ই-কমার্সে চালু হওয়া এ ধরনের বিতর্কিত স্কিমগুলো এখন যেহেতু আর অতটা অপরিচিত নয়, সেক্ষেত্রে এমনভাবে প্রতারিত হওয়ার দায় গ্রাহকদেরও নিতে হবে। কিন্তু ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং প্রচলিত বাণিজ্য ও ই-কমার্স উভয় খাতের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ই-কমার্সের কেলেঙ্কারি এবং প্রচলিত ব্যবসায়িক খাতের কারসাজির কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। এ পর্যায়ে এসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি এবং তদারকি ব্যবস্থার করুণ অবস্থা ফুটে উঠেছে। আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এবং বিশেষ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইন শপিং সম্পর্কিত ২৬ হাজার ৫৩৮টি অভিযোগ পেয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা উচিত।
সারা দেশে বাজার তদারকি, ভোক্তাদের অভিযোগ এবং অন্যান্য পণ্য ও পরিষেবা সম্পর্কিত সমস্যাগুলোকে সঠিকভাবে সমাধান করার ক্ষেত্রে এই সংস্থাগুলোর যথেষ্ট সক্ষমতা থাকা উচিত। ই-কমার্স ও প্রচলিত বাণিজ্যের জন্য আমাদের একটি টেকসই ও ভবিষ্যৎ উপযোগী সংস্কার করা প্রয়োজন, যা আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ব্যবসায়িক কারসাজি রোধ করতে পারে।
Comments