ঝুঁকিতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববাজার যেভাবে অস্থির হচ্ছে এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের এখনই তৎপর হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ভারত গত ১৩ মে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশকে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বোরো ধানের ভালো ফলনের পর সরকার এখন এর মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ দিকে, বিশেষজ্ঞরা খাদ্যশস্য মজুদের ক্ষেত্রে শুধু স্থানীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভর না করতে সরকারকে সতর্ক করছেন।

সরকারের উচিত তাদের এ সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে শিগগির আমদানির অন্যান্য উৎসের দিকে নজর দেওয়া। অন্যান্য দেশ থেকে আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা আসার আগেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বিশ্ববাজারে এখন যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে তা সামনের বেশ কিছু সময় বিরাজ করবে বলেই মনে হচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং এ কারণে বিশ্বব্যাপী সংকটের কথা উল্লেখ করে খাদ্যশস্যের ঘাটতির বিষয়ে অনেকেই এর আগে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

ভারতের গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। কারণ গত কয়েক বছর ধরে আমরা ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গম আমদানি করছি।

কিন্তু, আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু ভারত শুধু বাণিজ্যিক গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, সেক্ষেত্রে আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব খুব একটা পড়ার সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া, নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে সরকার চুক্তির মাধ্যমে গম আমদানি করতে পারবে।

অথচ, নিষেধাজ্ঞার মাত্র একদিনের মাথায় আমাদের স্থানীয় বাজারে গমের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশের মতো। এত অল্প সময়ে দাম এত বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা কী?

কর্মকর্তাদের বক্তব্য সঠিক হলে মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। সেক্ষেত্রে হয়তো ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে বিভিন্ন উৎস থেকে গম ও অন্যান্য খাদ্য পণ্য আমদানি করে শস্যের মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ইচ্ছামতো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যে কোনো প্রচেষ্টা ঠেকাতে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যথেষ্ট মুদ্রাস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। তাই মানুষ বিকল্প ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে ভাতের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে খাদ্যশস্যের ঘাটতি দেখা দিলে বা দাম আরও বাড়লে দেশ ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়তে পারে।

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে তাই সরকারের এখন কোনো অবস্থাতেই আত্মতুষ্টি দেখানোর সুযোগ নেই। সরকারের উচিত যত ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা আছে তা কাজে লাগানো।

ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমদানির নতুন ও বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা থেকে শুরু করে সরকারকে সস্তায় সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

5h ago