ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার আরও এক সাংবাদিক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জালে আটকা পড়লেন আরও একজন সাংবাদিক। আরও একবার ভয়ানকভাবে অপব্যবহার করা হলো এই আইনের। আইনের নামে এই ধরনের কাজ বহু পুরনো ঘটনা। এবার এই ঘটনার শিকার হয়েছেন জাগোনিউজ২৪.কমের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু। যিনি দুটি গণমাধ্যমের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
তানভীর হাসান তানু। ছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জালে আটকা পড়লেন আরও একজন সাংবাদিক। আরও একবার ভয়ানকভাবে অপব্যবহার করা হলো এই আইনের। আইনের নামে এই ধরনের কাজ বহু পুরনো ঘটনা। এবার এই ঘটনার শিকার হয়েছেন জাগোনিউজ২৪.কমের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু। যিনি দুটি গণমাধ্যমের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবারের অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্রোধিত হয়ে সম্প্রতি তানুসহ আরও দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তানু তার প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা তথ্য’ পরিবেশন করে ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’ এবং ‘হাসপাতাল ও সেখানকার কর্মীদের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত’ করেছে।

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে তানুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে তানুকে, যাতে পালাতে না পারেন। পরে অবশ্য ঠাকুরগাঁওয়ের আদালত তার অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করেছেন।

উল্লেখ্য, তানুকে জামিন দেওয়া হয়েছে তার অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে। তার বিরুদ্ধে আনা মামলা কম গুরুত্বপূর্ণ বলে নয়। যদিও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে তানুর বিরুদ্ধে যদি কোনো ‘অনিয়মের’ অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা আমাদের উদ্বেগের নিরসন করে না যে, একজন সাংবাদিক তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার হবে।

এখন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তানু সর্বশেষ জন। তবে, যুক্তরাজ্যভিক্তিক সংস্থা আর্টিকেল ১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯৮টি মামলায় বিভিন্ন পেশার ৪৫৭ জনকে অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে ৭৫ জনই সাংবাদিক।

সচেতন নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে ধরনের বিব্রতকর মামলা দায়ের করা হচ্ছে, তা সত্যিই খুব বিরক্তিকর। তা ছাড়া, এই আইনের অসংখ্য অপব্যবহারের উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও সরকার আইনটি বাতিলের দাবি যেভাবে উপেক্ষা করে চলেছে, সে বিষয়টিও সমানভাবে বিরক্তিকর।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকা ও অব্যাহতভাবে এই আইনের অপপ্রয়োগ হতে থাকার বিপদ হলো এর মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে সত্যিকারের অভিযোগগুলো গৌণ হয়ে উঠে। এর ফলে শুধু সাংবাদিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, সাধারণ মানুষ যাদের এই কঠিন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জীবনরক্ষাকারী তথ্য জানার অধিকার আছে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন।

দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই ধরনের জটিল নীরবতা ও কলঙ্কিত বিচার পেতে হয়েছে। মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্যে জনগণের শাস্তি প্রদান বন্ধের সময় এখন। আমরা তানভীর হাসান তানু ও তার সহকর্মীসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার হওয়া সবার মামলা তুলে নিতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এর পরিবর্তে যারা জবাবদিহিতা এড়াতে এই আইনের ব্যবহার করছে, তাদের কর্মকাণ্ড ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English
Abnormally high-priced purchases by Power Grid Company of Bangladesh

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.63 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.63 crore, which is 1,619 times the contract value.

13h ago