ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে

২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের (২০১৩ সালে সংশোধিত) বিতর্কিত ৫৭ ধারার চেয়ে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে আরও বেশি বিতর্কিত, এটি যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রণীত, আরও বেশি কঠিন, অনুদার, কর্কশ এবং আরও বিপজ্জনক ও ঢালাওভাবে ব্যবহার করার মতো একটি আইন, সেটি প্রমাণিত হয়েছে।

২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের (২০১৩ সালে সংশোধিত) বিতর্কিত ৫৭ ধারার চেয়ে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যে আরও বেশি বিতর্কিত, এটি যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রণীত, আরও বেশি কঠিন, অনুদার, কর্কশ এবং আরও বিপজ্জনক ও ঢালাওভাবে ব্যবহার করার মতো একটি আইন, সেটি প্রমাণিত হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল, যারা‌ একসময় নিজেরাই বাকস্বাধীনতা এবং ভিন্নমতের পক্ষে আন্দোলন করেছে, তাদের দ্বারা এমন একটি আইনের প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন বোধগম্য নয়।
ন্যায়সঙ্গতভাবেই অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো আইনটি নিয়ে আবারও উদ্বেগ ও শঙ্কা জানিয়েছে। যারা পুনরায় এই আইনটি পুরোপুরি বাতিল কিংবা ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের দাবির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছে। আইনটি এখন মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নির্মম অবজ্ঞারই ন্যাক্কারজনক প্রতীক হয়ে রয়েছে। দুঃখজনকভাবে এটি ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তার চেয়েও বিপজ্জনক হলো প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে এই আইনটি কঠোরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জানা গেছে, কেবল গত বছরেই এই আইনের আওতায় গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন ৭৫ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাসে এই আইনে সাইবার ট্রাইবুনালে ১৯৯টি মামলা হয়েছে।  আইনটির সবচেয়ে ঘৃণ্য দিক হলো, এখানে মানহানিকে একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যা তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার বা জামিন এড়াতে খুব কম সুযোগই দেয়। প্রশাসন কিংবা ক্ষমতা বলয়ের কাছাকাছি থাকা মানুষদের বিরুদ্ধে সমালোচনা থামাতে যেভাবে এই আইনটির ব্যবহার হচ্ছে, তা আমাদের পিতৃপুরুষদের স্বপ্নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের ঘটনায় বিষয়টি আরো উন্মোচিত হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রয়োজনে কোনো কথা থাকতে পারে না। আমরা মানলাম যে এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। কিন্তু প্রায়শ সমালোচনা, ভিন্নমত ও নিন্দা থেকে প্রশাসনকে বাঁচাতে এই জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য এতটাই অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে এ দুটি পরস্পরের সমার্থক হয়ে উঠেছে। শাসকদের এটা ভুললে চলবে না যে 'গণতন্ত্রে ভিন্নমত বিশ্বাসের কাজ করে'। আর ভিন্নমত প্রকাশ করার বিষয়টি যখন জরুরি হয়ে পড়ে, তখন নীরব থাকলে তা হয়ে উঠে দেশপ্রেমহীনতা।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

9h ago