ঢাকাকে বাঁচান

শহর হয় দিনে দিনে বাড়ে, না হলে পরিত্যক্ত হয়। ইতিহাসে আমরা এমনটাই দেখি। কিন্তু একটি শহর কি একইসঙ্গে, একই সময়ে বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি পরিত্যক্ত হওয়ার পথে এগোতে পারে? ঢাকা শহরের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে আপনি স্পষ্টতই দেখতে পাবেন যে, আমাদের প্রিয় রাজধানী একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে এবং পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হচ্ছে। এই শহরের 'আগ্রাসী উন্নয়নের' গল্প আলাদা করে বলার দরকার নেই। কিন্তু এই 'উন্নয়নের' জন্য আমাদের যেসব মূল্য দিতে হচ্ছে সেগুলো হলো— বিষাক্ত বাতাস, শব্দ দূষণ, অনিরাপদ পানি, জলাবদ্ধতা, ভয়াবহ যানজট, জনসংখ্যার অতি ঘনত্ব, নিত্যপণ্যের অত্যধিক মূল্য, এমন নানা কিছু।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ঢাকা এখন একই সঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর এবং পৃথিবীর বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে একটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিস্তারিত বলা হয়েছে যে, এই দূষণ কীভাবে এই নগরীর বাসিন্দাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে, স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং চলাচলের গতি কমিয়ে দিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকার বায়ুর মান ক্রমাগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫ এর পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। এর কারণ, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের ধোঁয়া, কারখানার ধোঁয়া, ইট ভাটার ধোঁয়া এবং ধুলা। এই মারাত্মক পরিস্থিতির ওপর কার্যত কোনো তদারকি নেই। অনিরাপদ পানির সমস্যাও কম উদ্বেগজনক নয়। ঢাকা ওয়াসাও তাদের ত্রুটিপূর্ণ পাইপের মাধ্যমে দূষিত পানি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। চলমান কলেরা প্রাদুর্ভাবের জন্য ওয়াসার এই দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থাকেও দায়ী করা হয়েছে। বিশেষ করে নদী ও খালগুলোতে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য নির্বিচারে ফেলার মাধ্যমে এই শহরের পানি নিয়মিত দূষিত করা হচ্ছে।
এরপর প্রায়ই উপেক্ষিত যে সমস্যাটি চলে আসে, তা হলো শব্দ দূষণ। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ শহর। এখানে গড় শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি ১১৯ ডেসিবেলে দাঁড়িয়েছে। যানবাহন, নির্মাণ এলাকা বা লাউডস্পিকার থেকে আসা এই শব্দ গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া সড়কে ভয়াবহ যানজটের প্রভাব বা তীব্র জলাবদ্ধতাও কম বিরক্তিকর নয়। সেই সঙ্গে রয়েছে পার্ক, খেলার মাঠ এবং সবুজের অভাব।
এতসব সমস্যা সত্ত্বেও আমরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন হই যে, কর্তৃপক্ষ ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার বিষয়ে আদৌ উদ্বিগ্ন কিনা। আমরা বিশ্বাস করি যে, শহরটি এখনও বাঁচানো সম্ভব। তবে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা নগর ব্যবস্থাপক ও পরিকল্পনাবিদদের অনুরোধ করছি, অবিলম্বে বাস্তবসম্মত ও জনমুখী একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন, ঢাকাকে বাঁচান।
Comments