সম্পাদকীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণরুম’ বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়

সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস শুরুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৫ অক্টোবর থেকে সীমিত আকারে ১৮টি হল খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মহামারির আগে যে সব শিক্ষার্থী গণরুমে থাকতেন, তারা স্বভাবতই হলে কোনো নিয়মিত আসন পাবেন কি না, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের একটি গণরুম। ফইল ছবি: সংগৃহীত

সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস শুরুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ৫ অক্টোবর থেকে সীমিত আকারে ১৮টি হল খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মহামারির আগে যে সব শিক্ষার্থী গণরুমে থাকতেন, তারা স্বভাবতই হলে কোনো নিয়মিত আসন পাবেন কি না, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন। 

প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা হলে উঠবেন। দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষা শেষে তারা হল ছেড়ে যাবেন। এরপর তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে হলে উঠতে পারবেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যনিরাপত্তাবিধি বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই গণরুম সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, কীভাবে গণরুমের 'সাবেক' বাসিন্দাদের জন্য আসনের ব্যবস্থা করা হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন হলে সাবেক ছাত্রদের দখলে থাকা আসনগুলো খালি করে সেগুলো গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে হলের আসন দখল করে রাখা সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং সেই আসনগুলো প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ জন্য তাদের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। 

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন তারা আসনের সুষ্ঠু বরাদ্দ নিশ্চিত করবেন। আমরা বুঝতে পারছি না তারা কীভাবে এটি করবেন। আমরা যতদূর জানি, আগেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন, কিন্তু তা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের প্রভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার অভিযোগ এসেছে। এখন গণরুমের বাসিন্দা শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, যদি প্রশাসন এই অবৈধ সাবেক শিক্ষার্থীদের হলে থাকা বন্ধ করতে না পারে, তাহলে তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে বসবাস করতে হবে। যা আরও অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করবে।

এ ছাড়া, কীভাবে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবেন যে, শুধু অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা শুরুতে হলে থাকতে পারবে, সেটাও দেখার বিষয়। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে গেলে যে ঝামেলাগুলো আসতে যাচ্ছে, তার একটি পূর্বাভাস আমরা দেখতে পেয়েছি গত রবিবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলো খোলার পর। দীর্ঘদিন পর গ্রন্থাগারগুলো খুলে দেওয়ায় সেখানে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য নীতিমালা মেনে চলেননি বললেই চলে এবং তারা প্রক্টরের সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা ও ক্লাস শুরু হওয়ার পর কী হতে পারে, তার একটি আগাম সতর্কবাণী হিসেবে আমরা এই ঘটনাকে বিবেচনা করতে পারি।

আমরা আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকবে এবং সকল প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেবেন। যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। 

আমরা আশা করব, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করবে এবং যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করেই কেবল নিজ বিদ্যাপীঠ খোলার উদ্যোগ নেবে। 

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Army now has public trust as it stands by the people: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today said the country's army has earned public trust and confidence by standing beside the people

6m ago