তরুণরা আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য

অর্থ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনুসারে, করোনা মহামারির ফলে প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন তরুণ চাকরি হারিয়েছেন এবং প্রায় ২০ মিলিয়ন তরুণের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।
এর আগে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছিল, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী যুব কর্মসংস্থান ৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মসংস্থান ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক মহামারির নেতিবাচক প্রভাবের চিত্র ফুটে ওঠে। তবে বাংলাদেশের যুব শ্রমশক্তির ওপর মহামারি বিশেষভাবে নিষ্ঠুর প্রভাব ফেলেছে।
আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও মহামারি শুরুর আগে থেকেই বাংলাদেশ তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও নতুন সুযোগ তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৬-১৭ অনুসারে দেশের সামগ্রিক বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ালেও তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া, ওই সময়ই কর্মসংস্থানের হার উদ্বেগজনক হারে কমে গিয়েছিল। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে গড় বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হলেও কর্মসংস্থানের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। মহামারি এই সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চাকরির বাজার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো ছাড়াও মহামারি আমাদের তরুণদের জন্য অন্যান্য নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। সরকারি সমীক্ষা অনুসারে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী তাদের ডিগ্রি সময়মতো শেষ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। পাশাপাশি, দীর্ঘ সময় ঘরে বসে থাকার কারণে অনেকের ঘুমের সমস্যা, স্থূলতা, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এই সমস্যাগুলোর সম্মিলিত প্রভাবের অর্থ হলো, আমরা সম্ভবত একটি সম্পূর্ণ প্রজন্ম ও সেই সঙ্গে তাদের উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা হারানোর ঝুঁকিতে আছি। এখন যখন বাংলাদেশের জনমিতিক মুনাফা (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) সদ্ব্যবহার করার সময় এসেছে, তখন বাংলাদেশ তরুণ জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে— বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এর সবটুকুর দায় মহামারির ওপর চাপানো যায় না।
উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতার সম্ভাবনা নষ্ট করে দেওয়া দুর্নীতির হার কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশকে জর্জরিত করে চলেছে। দুর্ভাগ্যবশত, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি কমার পরিবর্তে বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সুশাসনের অভাব আরেকটি কারণ, যা তরুণদের আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা থেকে বিরত রাখছে।
যেহেতু মহামারি সত্যিই আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে, সেহেতু আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলোর সমাধান করাই এখন পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের হাতে থাকা একমাত্র উপায়। সরকারি প্রতিবেদনেই তা স্বীকার করা হয়েছে।
সুতরাং আমরা আশা করি, নীতিনির্ধারকরা এখন জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দেবেন, যার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হবে যে, তরুণদের কাছে নিজেদের ও দেশের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরির এবং তাদের পথে প্রায়ই বাধা হয়ে দাঁড়ানো শাসন ও রাজনীতি বিষয়ক সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার সব উপকরণ থাকবে।
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
Comments