দুর্বল পরিকল্পনার প্রকল্প: বাড়তি সময়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন জবাবদিহিতা

প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে স্পষ্টতই সমস্যা আছে। খুব অল্প সংখ্যক সরকারি প্রকল্পই সময়মতো এবং বিপুল পরিমাণ বাড়তি ব্যয় ছাড়া শেষ হয়। কর পরিশোধ করে নাগরিকরা যে সেবা পাওয়ার আশা করেন, সেই প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সম্ভবত সবচেয়ে বড় বাধা।
নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে | স্টার ফাইল ছবি

প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে স্পষ্টতই সমস্যা আছে। খুব অল্প সংখ্যক সরকারি প্রকল্পই সময়মতো এবং বিপুল পরিমাণ বাড়তি ব্যয় ছাড়া শেষ হয়। কর পরিশোধ করে নাগরিকরা যে সেবা পাওয়ার আশা করেন, সেই প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সম্ভবত সবচেয়ে বড় বাধা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, বিপুল বিনিয়োগ করা সত্ত্বেও পাবলিক অবকাঠামো প্রকল্প (পিআইপি) বাস্তবায়নে সুশাসনের অভাব এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে।

এই বিষয়ে মন্তব্য করার পরপরই আমরা আরও একটি বিষয় জানতে পেরে দুঃখ পেয়েছি। আমরা জেনেছি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি পিআইপি ২৩৯ দশমিক ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ তা শেষ হয়েছে সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার ৫ বছর পর এবং এর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩৫৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা। সরকারি হিসাব মতে, প্রকল্পটি শেষ করতে ২৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সময় এবং ৪৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ লেগেছে।

এ ঘটনা ঘটার কারণ হচ্ছে, কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। অথচ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই একটি মৌলিক প্রয়োজন। এ কাজটি আগে না করায় পরবর্তী পর্যায়ে বেশ কয়েকটি সংশোধনের প্রয়োজন হয় প্রকল্পটিতে। দুর্ভাগ্যবশত, অন্যান্য অনেক প্রকল্পেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। এরপরও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্পকে সবুজ সংকেত দেয়—বিষয়টি হতবাক হওয়ার মতো।

সম্ভাব্যতা যাচাই না করলে যে অবস্থা হয়, দুর্বল সম্ভাব্যতা যাচাইও একই পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। এ ২টি বিষয়ই দেশের প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে বেশ সাধারণ ঘটনা। এগুলো ছাড়া, প্রকল্পের ব্যয়-সময় বাড়ার পেছনে সিপিডি অন্যান্য যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছে, তারমধ্যে সমন্বয়ে ব্যর্থতা, ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন ইত্যাদি আছে। আর এ সবকিছুর মূলে আছে অব্যবস্থাপনা।

বাস্তবায়নে বিলম্ব অন্যান্য সমস্যাও তৈরি করতে পারে, যা প্রকল্পকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই ওই প্রকল্পের ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের লাইসেন্স শেষ হয়ে যাবে। দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলোও যেভাবে দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে, তা দুঃখজনক।

সরকারি সহায়তা কর্মসূচিতে দুর্নীতি কমানোর উদ্দেশ্যে হাতে নেওয়া একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমাদের জানানো হয়েছে, ৮ বছর ধরে ৭২৭ কোটি টাকা ব্যয় করার পরও ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডেটাবেজ 'ব্যবহারযোগ্য হবে না'। এই ধরনের পদ্ধতিগত সমস্যা এবং এর হতাশাজনক ফলাফল ঠেকানোর জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই?

সরকারি সব প্রকল্প যেন সঠিকভাবে পরিকল্পিত ও বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানাই আমরা। দুর্বল পরিকল্পনার প্রকল্পগুলো কেবল আমাদের আর্থিক ক্ষতিই করে না, প্রকল্পের সম্ভাব্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন দিন ধরে চলছে এবং এর জন্য মূল্য দিতে হয়েছে জনসাধারণকেই। এই চর্চা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে আমাদের।

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

7h ago