প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করতে হবে

চলতি বছর জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি দূষণকারী দেশগুলোর জবাবদিহিতা আদায়ের উদ্যোগ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জলবায়ু সংক্রান্ত লড়াইয়ের জন্য ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ নেতৃত্বের জায়গায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
শূন্য দশমিক ৫ শতাংশেরও কম বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ করেও জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আমরা শুধু সেখানে কথা বলার নৈতিক অধিকার ছাড়াও মুজিব জলবায়ু উন্নয়ন কর্মসূচির মতো উদ্যোগ নিয়েও নেতৃত্ব দিয়েছি।
সব বিবেচনায়, জলবায়ু কূটনীতির বলয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত সদস্য।
তবে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ একই মুদ্রার ২ পিঠ। পুরোপুরি অবহেলা না করলেও বিশেষ করে প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা ভয়াবহভাবে অপ্রতুল।
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে গত ১৫ বছরে (২০০৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে) প্লাস্টিকের ব্যবহার ৩ গুণ বেড়েছে।
২০২০ সালে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হলেও তার মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। বাকিগুলো ভাগাড়, নদী, খাল, ড্রেন ও যত্রতত্র ফেলা হয়েছে।
প্লাস্টিক দূষণের প্রতি আমাদের উদাসীনতার কারণে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার প্রমাণ আমাদের নদীগুলোর করুণ অবস্থা।
গত মার্চে ঘোষণা করা হয় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুরু স্তর জমে থাকায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তা অপসারণ করতে ৪৯ কোটি টাকা (১৯ শতাংশ) ব্যয় বেড়েছে। পানিতে বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক ফেলার কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে পলি অপসারণের ড্রেজিং কার্যক্রমও কয়েক মাস বাড়াতে হয়েছে।
প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টন প্লাস্টিক বাংলাদেশ থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। যার ফলে আমাদের বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের কারণে শুধু সামুদ্রিক জীবন নয়, মানবস্বাস্থ্যের ওপরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে।
যে দেশ জলবায়ু কূটনীতির জন্য সুপরিচিত—২০০২ সাল থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, ২০২০ সালে উপকূলীয় অঞ্চলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে—সেই দেশ এখনো কীভাবে এমন বেপরোয়াভাবে উচ্চমাত্রায় প্লাস্টিক দূষণ করে চলেছে?
এটা স্পষ্ট যে, এখন পর্যন্ত সরকার তার নীতিকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি অব্যাহতভাবে চলতে দেওয়া যেতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে, টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা মেনে যতটা সম্ভব রিসাইকেল করে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন কমানোর।
একইসঙ্গে, প্লাস্টিকের প্যাকেজিংয়ের বিকল্প ব্যবহারের জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে পাটের পলিমার প্যাকেজিং ও ভুট্টা থেকে বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং উপকরণ উদ্ভাবন করেছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ প্লাস্টিক দূষণকারী দেশের তালিকা থেকে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। যা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের টেকসই সমাধান দিতে পারে।
এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতি পূরণ ও সেই অনুযায়ী কাজ করা এখন সংশ্লিষ্টদের ওপর নির্ভর করছে।
Comments