বায়ুদূষণে বাংলাদেশে প্রত্যাশিত আয়ু ৩ বছর কম

বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর ঢাকা
ঢাকায় বায়ুদূষণ। স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশিদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু যা হওয়ার কথা ছিল, বায়ুদূষণের কারণে তার চেয়ে প্রায় ৩ বছর কম। বায়ুদূষণ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশিদের প্রত্যাশিত আয়ু ২ দশমিক ৯১ বছর কম। এরমধ্যে বাইরের দূষণের কারণে কমছে ১ দশমিক ১৬ বছর ও ঘরের ভেতরে তৈরি দূষণে কমছে ১ দশমিক ৫৩ বছর। প্রতিবেদনে যে আরেকটি ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে তা হলো- ধূমপানের কারণে মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু যতদিন কমে, বায়ুদূষণেও তার সমান প্রত্যাশিত আয়ু কমে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থাকায় এই প্রতিবেদনটি খুব গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতে হবে ও বায়ুদূষণের কারণগুলো দূর করতে হবে।

বাতাসের মানের দিক থেকে বিশ্বের বড় শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা গত কয়েক বছর ধরে তলানিতে থেকেছে। বিষয়টি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার বাতাস সারা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত ছিল। বাতাসের মানের সূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৯৪। এই মানের বাতাসকে জনস্বাস্থ্যের জন্য 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২০ সালের বাতাসের মান নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, সে বছর বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম২.৫ কণা ছিল ৭৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে এটা দ্বিগুণেরও বেশি।

স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যে, দীর্ঘদিন অস্বাস্থ্যকর বাতাসে থাকলে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা হবে। হৃদরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত রোগ, ফুসফুসে সংক্রমণ ও ক্যান্সারের সঙ্গে বায়ুদূষণের সরাসরি সম্পর্ক আছে। মৃত্যু ও প্রতিবন্ধীতার মূল কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি কারণ।

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণগুলো অনেক আগেই বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা, গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণ কর্মকাণ্ড থেকে তৈরি হওয়া ধুলাকে প্রধান ৩ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুঃখজনক ব্যাপার হলো— হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে সারাদেশে অবৈধ ইটভাটাগুলো এখনো চালু আছে। অন্যদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যাও আমাদের রাস্তাগুলোতে বাড়ছে। আর কনস্ট্রাকশন এলাকার ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্যও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, সম্প্রতি আমাদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু মাত্র শূন্য দশমিক ২ বছর বেড়েছে। ২০১৯ সালে ৭২ দশমিক ৬ বছর থেকে বেড়ে ২০২০ সালে এটা ৭২ দশমিক ৮ বছর হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত বায়ুদূষণ আমাদের এই অগ্রগতির ফল খেয়ে ফেলতে পারে।

বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত থাকায় কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই এই সমস্যা সমাধানে কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা।

Comments

The Daily Star  | English
IMF World Bank Spring Meetings 2025

IMF-World Bank meetings end with little tariff clarity, but economic foreboding

Many participants in the Spring Meetings had a sense that Trump's admin was still conflicted in its demands from trading partners

2h ago