অটোগ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে

বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) অথবা অটোগ্যাসের রিফুয়েলিং স্টেশনের সংখ্যা ও এর ব্যবহারও খুব দ্রুত বাড়ছে। সরকারও চাইছে অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে।
ইতোমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ১৩টি এলপিজি প্রতিষ্ঠানকে দেশজুড়ে দুই হাজার ৫৫০টি অটোগ্যাস স্টেশন বসানোর অনুমোদন দিয়েছে। বেশ কিছু স্টেশনের সঙ্গে কনভার্শন সেন্টারও থাকবে, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানিতে চালিত যানবাহনকে অটোগ্যাসে চলার উপযোগী যানবাহনে রূপান্তর করা যাবে।
এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো (অপারেটর) ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০টি অটোগ্যাস স্টেশন স্থাপন করেছেন এবং সেখানে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ গাড়িকে রূপান্তর করে এলপিজিতে চলার উপযোগী করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তিনটি প্রতিষ্ঠান—পদ্মা ওয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা ওয়েল কোম্পানির সঙ্গে অপারেটরগুলো চুক্তি সই করেছে। এখন অপারেটররা এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনকৃত রিফুয়েলিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে অটোগ্যাস স্টেশন বসিয়ে সেখানে এলপিজি সরবরাহ করছে।
তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার ১০০ নিবন্ধনকৃত স্টেশনে অটোগ্যাস পাম্প বসানোর জন্য একজন এলপিজি অপারেটরকে প্রতি লিটার এলপিজির জন্য বিপিসি ও তেল প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক টাকা করে রয়ালটি ফি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেহেতু সিএনজি গ্রিডলাইনটি দেশের ৩৫ শতাংশেরও কম জায়গাজুড়ে বিস্তৃত, অনেক অপারেটর দেশের উত্তর ও দক্ষিণের অঞ্চলগুলোতে অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশন বসাচ্ছে।
অটোগ্যাস খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিএম এনার্জি ইতোমধ্যে ১৫০টি স্টেশন তৈরি করেছে। এর মধ্যে ৪০টি তাদের নিজস্ব বিনিয়োগে তৈরি, যার মূল্যমান ৫৫ থেকে ৬০ কোটির মধ্যে।
বিএম এনার্জির অটোগ্যাস ও অপারেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, '২০১৮ সালে মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর আমরা চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দুটি স্টেশন বসিয়েছিলাম। কিন্তু, সেসময় বিক্রি খুব কম হতো, কারণ খুব বেশি মানুষ এটার বিষয়ে জানতেন না।'
কিন্তু, ২০১৯ সালে অনেক মানুষ তাদের গাড়িকে সিএনজিতে চলার জন্য রূপান্তর করাতে বিক্রির পরিমাণ বাড়তে থাকে।
মাসিক বিক্রির পরিমাণ ২০২০ সালে এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দুই হাজার ২০০ টন হয়েছিল। বর্তমান বিক্রির পরিমাণ দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টন।
ইয়াসিন বলেন, 'দীর্ঘায়িত লকডাউনের কারণে ২০২১ সালের প্রথমার্ধ্বে অটোগ্যাস বিক্রিতে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা স্থবির ছিল।'
বিএম এনার্জি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৪৫০টি অটোগ্যাস সেন্টার ও ৫০টি কনভার্শন সেন্টার খোলার অনুমোদন পেয়েছে। তিনি জানান, আরও এক বছরের মধ্যে ৫০টি অটোগ্যাস স্টেশন খুলবে।
ওমেরা গ্যাস ওয়ানের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ৩২টি অটোগ্যাস স্টেশন চালু করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির মাসিক বিক্রি ২০২০ সালে এর আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে ৭০০ টন হয়েছে। এখন এটি প্রতি মাসে তারা এক হাজার টন বিক্রি করছে।
কামাল বলেন, 'আমাদের প্রায় প্রতিটি রিফুয়েলিং স্টেশনে কনভার্শন সুবিধা রয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় এক হাজারেরও বেশি যানবাহনের রূপান্তর করেছি।'
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি মাসে ১০০টি করে যানবাহনের রূপান্তর করে।
উচ্চমানের এলপিজি রূপান্তরের জন্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং সিএনজিতে রূপান্তরের খরচ প্রায় ৯০ হাজার টাকা।
এই খাতের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যক্তিদের মতে প্রায় ৩৫ হাজার যানবাহনে অটোগ্যাস ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতি মাসে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টন গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে।
পেট্রোম্যাক্স এলপিজির চিফ অপারেটিং অফিসার ফিরোজ আহমেদ জানান, তারা ইতোমধ্যে ৪০টি স্টেশনে অটোগ্যাস সুবিধা চালু করেছেন।
তাদের মাসিক বিক্রি ২০২০ সালে ২৫০ টন ও ২০১৯ সালে ১৫০ টন ছিল। এখন মাসে ৫০০ টন গ্যাস বিক্রি হচ্ছে।
বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট-১ এর হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট তাসনুভা চৌধুরী জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি ২১টি স্টেশনে এলপিজি সরবরাহ করে।
তারা বর্তমানে মাসে ২৭০ টন গ্যাস বিক্রি করছেন, জানান তিনি।
জি-গ্যাস এলপিজি ইতোমধ্যে ৪২টি অটোগ্যাস স্টেশন বসিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের জ্বালানি প্রকৌশল খাতের অন্যতম প্রধান সংস্থা এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের একটি অঙ্গসংগঠন।
তারা বর্তমানে মাসে ৬৫০ টন গ্যাস বিক্রি করছে।
জি-গ্যাসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুমায়ুন রশীদ জানান, এলপিজি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি এবং এটিই ভবিষ্যতে বেশি ব্যবহৃত হবে।
তিনি বলেন, 'একে দেশের যেকোনো জায়গায় পরিবহন করা যায়, এমনকি প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোতেও।'
এই খাতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস, জেএমআই ও যমুনা গ্যাস।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী জানান, সরকারি নীতিমালার সহায়তা পাওয়া গেলে অটোগ্যাসের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল হতে পারে।
তিনি জানান, এটি অন্য যেকোনো ধরনের খনিজ অথবা জীবাশ্ম ভিত্তিক তেল, যেমন: ডিজেল, কেরোসিন অথবা মোটরগাড়িতে ব্যবহৃত তেলের চেয়ে সাশ্রয়ী। এটি হালকা ও এতে সিএনজির চেয়ে বেশি দূরত্ব যাওয়া যায়।
তিনি জানান, 'যদি সরকার প্রাকৃতিক গ্যাসকে উৎপাদনশীল খাতের জন্য বিবেচনা করে এবং এলপি গ্যাসকে গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ দেয়, সেক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছরে এই খাতে বিপুল পরিমাণ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।'
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব (অপারেশন) ড. মহ. শের আলী বলেন, 'পূর্বাভাস আছে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত এক সময় কমে যাবে। এ কারণে আমরা এলপিজি বা অটোগ্যাসকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি।'
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments