উচ্চমূল্য ও অতিরিক্ত কনটেইনার ভাড়ায় কমছে পাট রপ্তানি

স্থানীয় বাজারে উচ্চমূল্য থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে রেকর্ড ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

স্থানীয় বাজারে উচ্চমূল্য থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে রেকর্ড ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

সেই উচ্চমূল্যের ধারা চলতি অর্থবছরেও বলবৎ আছে। তবে এর সঙ্গে অতিরিক্ত কনটেইনার ভাড়া যুক্ত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্রমবর্ধমান চালান স্থবির হয়ে পড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে পাটকল মালিকরা ২১২ মিলিয়ন ডলারের পাট ও পাটজাত পন্য রপ্তানি করেছেন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩১ শতাংশ কম।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলছেন, 'আমরা সত্যিই হতাশ। নিতান্ত অপরিহার্য না হলে ক্রেতারা নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না।'

স্থানীয় বাজারে পাটের দাম উচ্চ। অন্যদিকে গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী কনটেইনার সংকটের কারণে কনটেইনার পরিবহন খরচ প্রায় ১০ গুণ বেড়ে ১৮ হাজার ডলার থেকে ১৯ হাজার ডলারে পৌঁছেছে।

পাটের উচ্চমূল্য ও বর্ধিত চাহিদার কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে রেকর্ড ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়।

পাটকল মালিকরা বলছেন, দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছেন। রপ্তানিতে বিপুল চাহিদা ও আগের মৌসুমে উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি মন পাটের দাম ৫ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। যা যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি।

পাশাপাশি কনটেইনার পরিবহনের খরচ ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকায় তা পাটকলগুলোর অবস্থা নাজুক করে তুলেছে। যা মূলত রপ্তানি বাজারের জন্য সুতা, ব্যাগ, বস্তা ও অন্যান্য পাটজাত পণ্য তৈরি করে।

পাট চাষে অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে দেশের পাটচাষীরা গত ৫ বছর ধরে বার্ষিক ৮০ লাখ বেল পাট উৎপাদন করেছে। যা মূলত শিল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়।

এখন নতুন মৌসুমের কাঁচা পাট বাজারে এসেছে। তবে এর প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা দরে।

বিজেএমএ চেয়ারম্যান পাটোয়ারী বলছেন, পাটের দাম এখনও বেশি। যে কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা পাটজাত পণ্যের বিকেল্পের দিকে ঝুঁকছেন।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশই আসে পাট থেকে তৈরি করা সুতা রপ্তানির মাধ্যমে।

এই সুতা কার্পেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আর তুরস্কের কার্পেট প্রস্তুতকারকরা বাংলাদেশে উৎপাদিত সুতার প্রধান ক্রেতা।

পাটোয়ারী বলেন, 'কিন্তু অনেক ক্রেতা এখন কার্পেট তৈরিতে পুনর্ব্যাবহারযোগ্য তুলা ব্যবহার করছেন।'

ইপিবির তথ্য অনুসারে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আঁশ ও সুতা প্রস্তুতকারকরা। কারণ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের রপ্তানি আয় ১২৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গত বছরের তুলনায় যা ৪০ শতাংশ কম।

বিজেএমএ চেয়ারম্যান বলেন, 'বেশ কয়েকটি পাটকল তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।'

উত্তরা জুল মিলসের চেয়ারম্যান গিরিধরী লাল মোদী বলছেন, তুরস্কে পাটজাত পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত। এ ছাড়া কনটেইনার ভাড়াও খুব বেশি।

পাটোয়ারীর ভাষ্য, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Women MPs in reserved seats: How empowered are they really?

Fifty-two years ago, a provision was included in the constitution to reserve seats for women in parliament for a greater representation of women in the legislative body.

8h ago