পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, শ্রমিকদের ঈদ যাত্রা অনিশ্চিত

আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় মেশিন অপারেটর নিজাম উদ্দিন। পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আযহা উদযাপন করতে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে যাবেন কি না— সেই সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারছেন না তিনি।
কারণ ঈদের ছুটি কত দিনের হবে, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন। এ ছুটি যেমন তিন দিনের হতে পারে, তেমনি হতে পারে ১৭ দিনেরও।
তার মতো আরও হাজারো পোশাক শ্রমিকের অবস্থাও একই। ২৩ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া ১৪ দিনের লকডাউনে সরকার কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা।
বিধিনিষেধ চলাকালে কারখানা বন্ধই থাকার কথা। কিন্তু, গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল কারখানার মালিকরা ওই সময় কারখানা খোলা রাখার জন্য গত বুধবার থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত যদি সরকার এতে রাজি না হয়, তবে অন্তত ৫ আগস্টের বদলে ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
বিধিনিষেধ চলাকালে কারখানা খোলা রাখার আবেদনে সরকার সাড়া দিলে ঈদের দুদিন পর, অর্থাৎ ২৩ জুলাই লকডাউন শুরুর দিন থেকে কারখানায় উপস্থিত থাকতে হবে শ্রমিকদের। ফলে কেউ বাড়িতে গেলে তাকে ঈদের পরদিনই বাড়ি থেকে রওনা হতে হবে। এতে করে খুব অল্প সময় বাড়িতে থাকার সুযোগ পাবেন তারা।
আর যদি শ্রমিকদের ১ তারিখ থেকে কাজে ফিরতে হয়, তাতেও তাদের সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ, ওই সময় বিধিনিষেধ চলমান থাকায় গ্রাম থেকে ফেরার মতো গণপরিবহন পাবেন না তারা।
গত বছর এমন পরিস্থিতি ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে কারখানায় ফিরতে হয়েছে তাদের। ফলে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় এবার ঈদে অনেকে ঢাকাতেই থেকে যাবেন।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান জানান, বিধিনিষেধ ও কারখানা খোলা রাখা নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার কারণে এবার প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক গ্রামের বাড়ি যাবেন না।
তিনি বলেন, ‘এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিভ্রান্তি দূর করতে একটি স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন।’
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, লকডাউন চলাকালে বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় গ্রামে গিয়ে ফিরে আসতে শ্রমিকদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তাই কারখানা খোলা রাখলে শ্রমিকদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের জন্য লকডাউনের কড়াকড়ি কমানো উচিত।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, শ্রমিকদের বড় একটি দুশ্চিন্তার কারণ পরিবহন। যানবাহন না পেলে চাকরি বাঁচাতে অনেক শ্রমিককেই গত বছরের মতো গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকায় ফিরতে হবে।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে, কারখানা খোলার বিষয়ে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে অনেক শ্রমিককে গত বছর ৫০ কিলোমিটারও হাঁটতে হয়েছে। আর যারা শরীরকে এতো ধকলে ফেলতে চাননি, তাদের দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া দিয়ে কোনোমতে কর্মস্থলে ফিরেছেন।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে কখন নির্দেশনা আসবে আমরা জানি না। আমরা আশা করছি সরকার লকডাউন শিথিল করবে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের আবেদন বিবেচনা নাও করতে পারে। তাই এখনও কিছুই পরিষ্কার নয়।’
পরিবহন সমস্যা, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় এবং টিকা গ্রহণ—এ তিনটি কারণেই হয়তো বেশিরভাগ শ্রমিক এবার কর্মস্থল ত্যাগ করবেন না।
ফারুক হাসান জানান, গাজীপুরের দুটি কারখানায় গতকাল রোববার থেকে পোশাক শ্রমিকদের গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ১২ হাজারের বেশি শ্রমিক টিকা পেয়েছেন।
সমিতির সদস্য সব কারখানাকে যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের টিকা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম।
Comments