ক্যাম্পাস

নোটিশ দিয়ে ১০০ টাকার বিনিময়ে ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ দেখার নির্দেশ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র 'চিরঞ্জীব মুজিব' ১০০ টাকা দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র 'চিরঞ্জীব মুজিব' ১০০ টাকা দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গত ১লা জানুয়ারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সইসহ একটি নির্দেশনা নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, 'ব্যবস্থাপনা বিভাগের সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অধ্যক্ষ মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র "চিরঞ্জীব মুজিব" বগুড়ার মধুবন প্রেক্ষাগৃহে ১০০ টাকার বিনিময়ে চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য তাদের স্ব স্ব শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি, রোল, নাম ও সেশন উল্লেখপূর্বক তালিকা প্রস্তুত করে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মো. আজহার আলীর নিকট আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।'

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রেজাউন নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এই নোটিশের মাধ্যমে ছাত্রদের উৎসাহিত করেছি। এটা অধ্যক্ষ মহোদয়ের নির্দেশ ছিল। গতকাল আমার বিভাগের ১৫০ জন শিক্ষার্থী রাত সাড়ে ১০টায় এই সিনেমা দেখে এসেছে। কাউকে বাধ্য করা হয়নি। অধ্যক্ষের নির্দেশে এই রকম নোটিশ সব ডিপার্টমেন্টেই দেওয়া হয়েছে।'

কলেজের একমাত্র নারী হোস্টেলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের হলের প্রায় ১৬০ জন শিক্ষার্থীকে হোস্টেলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা ফ্রিতে "চিরঞ্জীব মুজিব" দেখিয়েছেন। কিন্তু অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা হোস্টেলের বাইরে থাকেন, তাদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।'

জানতে চাইলে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শাহজাহান আলী বলেন, 'আমি কাউকে নোটিশ দিতে বলিনি। যদি কেউ নোটিশ দেয় সেটা তার ব্যাপার। আমি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে "চিরঞ্জীব মুজিব" দেখার নির্দেশ দিয়েছি এ কথা ভিত্তিহীন।'

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একজন অধ্যাপক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধ্যক্ষ মহোদয় শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের ওপর চাপ দিয়েছেন যেন শিক্ষার্থীরা হলে গিয়ে ১০০ টাকার বিনিময়ে এই চলচ্চিত্রটি দেখে। আমরা নোটিশ দিতে চাইনি প্রথমে, কিন্তু প্রিন্সিপালের চাপাচাপিতে নোটিশ দিতে বাধ্য হয়েছি।'

'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তো সব কিছুর ঊর্ধ্বে। তিনি একজন মহান ব্যক্তি। তার জীবনী থেকে নেওয়া ছবি সবাই ইচ্ছে করেই দেখবে। এখানে নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের দেখানোর কোনো মানে হয় না,' যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোর্শেদা নাজনীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কোনো নোটিশ দেইনি। কিন্তু শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছি। এটা অধ্যক্ষ মহোদয়েরই নির্দেশ ছিল। তবে শিক্ষার্থীরা অনেকে ১০০ টাকা দিতে রাজি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।'

তিনি আরো বলেন, 'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালায়। তাই অনেকের ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও ১০০ টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার হয়তো সামর্থ্য নেই। আমি অধ্যক্ষ মহোদয়কে বলেছিলাম যেন সিনেমাটি আমাদের অডিটোরিয়ামে ফ্রিতে শিক্ষার্থীদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আমার প্রস্তাবটি তিনি শোনেননি।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, 'আমি কাউকে বাধ্য করিনি। শুধু শ্রেণীকক্ষে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বলেছি যেন তারা এই সিনেমাটি দেখে। যে সব শিক্ষক বলেছেন আমি চাপ দিয়েছি তাদের কথা ভিত্তিহীন।'

বগুড়ার মধুবন প্রেক্ষাগৃহের কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে 'চিরঞ্জীব মুজিব' এ হলে প্রদর্শিত হচ্ছে। এর সর্বনিম্ন প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা।

নজরুল ইসলাম পরিচালিত ও লিটন হায়দার প্রযোজিত পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র 'চিরঞ্জীব মুজিব' দেশে প্রথম বগুড়ার মধুবন সিনে কমপ্লেক্সেই প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি।

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

1h ago