‘কিতা করমু তকদির মন্দ, বড় অসহায় অইয়া পড়লাম’

কোমরপানিতে দাঁড়িয়ে বন্যার পানিতে পচে যাওয়া ভাঙা ঘরের বেড়াগুলো ঠিক করছেন নিপেন্দ্রে নাথ। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওড়পাড়ের আবুতালিপুর গ্রামের বাসিন্দা নিপেন্দ্রে নাথ। প্রথম দফা বন্যায় ভাগচাষের (বর্গা জমি) প্রায় দুই বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। তাই কোনো ফসল মেলেনি। আর এবারের বন্যায় ঘরে হাঁটু পানি।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বর্গা জমির ওপরেই আমার সংসার চলে। কিতা করমু (কি করবো)। তকদির মন্দ। বড় অসহায় অইয়া পড়লাম (হয়ে গেলাম)।'

শনিবার বিকেলে আবুতালিপুরে গিয়ে দেখা যায় ৬০ পেরোনো নিপেন্দ্রে নাথে বাড়ির সামনে কোমরপানি। সেই কোমরপানিতে দাঁড়িয়ে বন্যার পানিতে পচে যাওয়া ভাঙা ঘরের বেড়াগুলো ঠিক করছেন।

নিপেন্দ্র জানান, গত শনিবার থেকেই পানি বাড়ছে। সেদিনই তার বাড়িতে বন্যার পানি উঠে যায়। ঘরে চাল, আটা সব ভিজে গেছে। চারদিকে পানি থাকায় কোনো কিছু্ সরানোর সুযোগ নেই। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে কিছুই করার নেই। বৃষ্টি হলেই ঘুমাতে পারেন না। কারণ তার ঘরটির টিনের চালে অজস্র ছিদ্র।

তিনি বলেন, 'বৃষ্টির ফোটা পড়ে যেন কাথাগুলো না ভিজে যায় সেজন্য টিনের দুই তিনটা ছিদ্রের বিপরীতে একটি করে বাসন রেখে দিয়েছি। তবুও কাজ হচ্ছে না। মাঝে মাঝে আমি ও আমার বউ মিলে বাসন হাতে নিয়ে সারারাত বসে থাকি। যেন বিছানাটা অন্তত শুকনো থাকে। ঘরের মেঝেতে বন্যার পানি।'

তিনি আরও বলেন, 'ছেলে নয়ন দেবনাথ রং মেস্তরির যোগালি (সহকারী)। বন্যার পর থেকে কোনো কাজই পাচ্ছে না। আর আমার গেজের বেমার (রোগ) ও বউয়ের অনেক অসুখ বিসুখ। তকদির মন্দ। বউ খালি কান্দে। কইছি, কান্দিও না। তকদিরে যা আছে, তাই অইবো।'

'এরকম পানি আর কোনোদিন দেখছি না। ঘরেও পানি উঠি গেছে। চেষ্টা করছি থাকার জন্য। হেলে পড়া ভাঙা ঘরটি এখন শেষ ভরসা। কোনমতে টিকানির চেষ্টা করা আরকি,' বলেন তিনি।

তার প্রতিবেশী আজিজুল ইসলাম বলেন, 'সবার বাড়িতেই পানি। কিন্তু নিপেন্দ্রকে দেখলে মায়া লাগে। বড় নিরুপায় হয়ে আছে অসুস্থ লোকটা। বৃষ্টি হলেই তারা ঘুমাতে পারে না। তাদের হেলে যাওয়া বাড়িটি বাতাসে যে কোনো সময় পড়ে যাবে।'

নিপেন্দ্র জানান, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ত্রাণ পেলেও কোথায় রান্নাবান্না করবেন তা নিয়েও চিন্তা করতে হয়। হারানো সম্পদ হয়তো ফিরে আসবে না। আর এই পানিও থাকবে না। কিন্তু, হেলে পড়া ভাঙা ঘরটি হারিয়ে গেলে মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও হারাতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus opens second round of talks to strengthen national unity

'Beautiful July Charter' would be unveiled following discussions, he says

3h ago