তিস্তাপাড়ে আকস্মিক বন্যায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি

অসময়ে ভয়াবহ বন্যায় তিস্তাপাড়ে কৃষি, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ ও অবকাঠামোগত প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৮টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ৩২ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে ক্ষতির পরিমাণ ও তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান, ভুট্টা, বাদাম, আলুসহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হয়েছে। ছবি: স্টার

অসময়ে ভয়াবহ বন্যায় তিস্তাপাড়ে কৃষি, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ ও অবকাঠামোগত প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৮টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ৩২ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে ক্ষতির পরিমাণ ও তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রস্তুতকৃত ক্ষতির তালিকা থেকে জানা যায়, ৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান, ভুট্টা, বাদাম, আলুসহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৮০০টি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি টাকা। ৩০০টি খামারের মুরগিসহ ৩ হাজার পরিবারের হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট-সেতু, সড়ক ও অবকাঠামো ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৮০ কোটি টাকা এবং ১ হাজারের বেশি পরিবারের ঘর-বাড়ি ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি টাকা।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্বাস আলী (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান ও ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলেন। অসময়ে আকস্মিক বন্যায় জমির সবগুলো ফসল নষ্ট হয়েছে। তার ৬০টি মুরগি ও হাঁস পানিতে ভেসে গেছে। ৩ বিঘা জমির পুকুরের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ৪টি ঘরের একটি ঘর ভেসে গেছে পানিতে।

বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট-সেতু, সড়ক ও অবকাঠামো ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। ছবি: স্টার

তিনি বলেন, 'অসময়ে আকস্মিক এই বন্যা ছিল ভয়াবহ। এরকম বন্যা আমি দেখিনি। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এত বেশি ক্ষতি হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া খুব কষ্টের।'

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নুর আলম (৫৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দহগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। উজানে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রথমে সরাসরি দহগ্রামে এসে আঘাত হানে। জমির ফসল, ঘর-বাড়ি ও গবাদি পশু-পাখি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো উপায় নেই।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আউয়াল হোসেন (৬৪) জানান, এমনিতে তিস্তা নদীর ভাঙনে তারা নিঃস্ব হয়েছেন। তার ওপর অকালে আকস্মিক বন্যায় তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। ১০ বিঘা জমির বাদাম ও আলু নষ্ট হওয়ায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

তিনি বলেন, 'অকাল বন্যা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারনাই ছিল না।'

এরকম বহু পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: স্টার

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত থেকে উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থোকে। বুধবার সকাল থেকেই তিস্তাপাড়ের চর, দ্বীপচর ও নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। শুক্রবার সকাল থেকে দুর্গত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ দৃশ্যমান হয়।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তাপাড়ের কৃষক পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে কী ধরনের সহয়তা দেবে, তা এখনও মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়নি।'

লালমনিরহাট এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অকালে আকস্মিক বন্যায় সেতু-কালভার্ট ও সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করা হবে।'

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যাদুর্গতদের আপাতত নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

7h ago