রাজারহাটে তিস্তায় ৫ গ্রাম বিলীন

এক সপ্তাহ আগেও সেখানে বসতভিটা ছিল। ছিল প্রাণের স্পন্দন ও মানুষের কোলাহল। পায়ে হেঁটে, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় লোকজন চলাচল করতেন। এখন সেখানে শুধু পানি আর পানি। চলছে নৌকা। সাক্ষী হয়ে নদীর মাঝখানে এখনো দাঁড়িয়ে আছে একটি নারিকেল গাছ। লড়াই করছে স্রোতের সঙ্গে।
ভাঙনে বিলীন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বগুড়াপাড়া গ্রামের একটি নারকেল গাছ তিস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১। ছবি: এস দিলীপ রায়

এক সপ্তাহ আগেও সেখানে বসতভিটা ছিল। ছিল প্রাণের স্পন্দন ও মানুষের কোলাহল। পায়ে হেঁটে, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় লোকজন চলাচল করতেন। এখন সেখানে শুধু পানি আর পানি। চলছে নৌকা। সাক্ষী হয়ে নদীর মাঝখানে এখনো দাঁড়িয়ে আছে একটি নারিকেল গাছ। লড়াই করছে স্রোতের সঙ্গে।

তিস্তায় ভাঙছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের নামাভরত গ্রাম। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১। ছবি: এস দিলীপ রায়

রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে তিস্তা নদী। তীব্র হয়েছে ভাঙন। প্রায় ২ মাস আগে শুরু হওয়া ভাঙন এখনো চলছে। তিস্তার ভাঙনে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম— চর গতিয়াশ্যাম, বগুড়াপাড়া, খিতাব খাঁ, নাকেন্দা ও ঢুসমারা এখন নদীগর্ভে।

এই গ্রামগুলো হারিয়ে গেছে ঘড়িয়ালডাঙ্গার মানচিত্র থেকে।

চর গতিয়াশ্যাম গ্রামের ভাঙনকবলিত কৃষক কফিল উদ্দিন (৬৩) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে দুই হাজারের বেশি পরিবার বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগান হারিয়ে হয়েছে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকের দিন কাটছে খোলা আকাশে নিচে। তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে এসব গ্রামের ৬টি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা।'

ভাঙনকবলিতদের জন্যে নামাভরত গ্রামে টাকা তুলছেন শিক্ষার্থীরা। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১। ছবি: এস দিলীপ রায়

নামাভরত গ্রামের ভাঙনকবলিত সফর উদ্দিন (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর আগে তিস্তার এমন তীব্র ভাঙন দেখিনি। ৫টি গ্রাম বিলীন করে এখন নামাভরত গ্রাম ভাঙছে। ভাঙনকবলিতরা ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। অন্য গ্রামের মতো যেকোনো সময় এই গ্রামটিও বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি।'

'ভাঙনরোধে ও ভাঙনকবলিতদের সহায়তা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন এগিয়ে আসছে না,' উল্লেখ করে নামাভরত গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তাই স্থানীয় শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে রাস্তার পাশে দানবাক্স নিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাঙনকবলিতদের জন্যে গ্রামবাসী ও পথচারীদের কাছ থেকে টাকা তুলছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষার্থীরা নদীপাড়ে বাঁশ দিয়ে ২ কিলোমিটার পাইলিং করছে। দানের টাকা দিয়ে তারা ভাঙনরোধের চেষ্টা করছে।'

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, তারা বালুভর্তি জিও ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, ভাঙন তীব্র হওয়ায় তা ঠেকানো যায়নি।

প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন চলছে বলেও জানান তিনি।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে তাসনিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙনকবলিতদের নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাদেরকে ঘর তৈরির জন্যে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.63 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.63 crore, which is 1,619 times the contract value.

6h ago