অস্ট্রেলিয়ায় স্বেচ্ছামৃত্যু এবং বিজ্ঞানী ডেভিড গুডাল

চলতি বছরের জুলাই মাসে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় ‘সহায়তায় আত্মহত্যা’ নামে একটি বিশেষ আইন কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসে একই ধরনের আইন পাশ করা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। কেবল অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এই আইন প্রযোজ্য হবে। লাইফ সাপোর্টে থাকা ব্যক্তিও সহায়তা নিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটাতে পারবেন।
সিডনি অপেরা হাউজ। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের জুলাই মাসে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় 'সহায়তায় আত্মহত্যা' নামে একটি বিশেষ আইন কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসে একই ধরনের আইন পাশ করা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। কেবল অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এই আইন প্রযোজ্য হবে। লাইফ সাপোর্টে থাকা ব্যক্তিও সহায়তা নিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটাতে পারবেন।

এই আইন পাশের পর আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে ২০১৮ সালে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে একটি ক্লিনিকের সাহায্য নিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণকারী বিজ্ঞানী ডেভিড উইলিয়াম গুডাল। তিনি যখন স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছা পোষণ করেন তখন তা ছিল অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ। অবশ্য তখন আইনটি কার্যকর থাকলেও ওই আইনের অধীনে গুডাল স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণ করতে পারতেন না। কারণ তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ।

গুডাল যখন অস্ট্রেলীয় সরকারের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চান তখন ২ কোটি ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর দেশটি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল গুডালের সিদ্ধান্ত। তার মৃত্যুকে 'একটি অবিস্মরণীয় মৃত্যু' বলে উল্লেখ করেছিল বিশ্ব মিডিয়া। অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে তাদের অবিসংবাদিত বিজ্ঞানীর মৃত্যুর কাহিনীটি এখনো রূপকথার গল্পের মতো।

ডেভিড উইলিয়াম গুডাল। ছবি: সংগৃহীত

আজ থেকে তিন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডেভিড গুডাল স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের জন্য আবেদন করেছিলেন দেশটির সরকারের কাছে। যেহেতু তখন অস্ট্রেলিয়ায় স্বেচ্ছামৃত্যু নিষিদ্ধ ছিল তাই গুডাল উড়াল দিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডে। ১০৪ বছর বয়সী উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডেভিড গুডালের এই স্বেচ্ছা মৃত্যুতে সাহায্য করেছে সুইজারল্যান্ডের বাসেলের লাইফ সার্কেল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি ২০১৮ সালের ১০ মে সহায়তা নিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেন।

দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে গুডাল এবিসি টেলিভশনকে বলেছিলেন, মৃত্যুর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা আমার আর সইছে না। এই সুন্দর দেশ ছেড়ে আমি সুইজারল্যান্ডে যেতে চাই না। কিন্তু আমি স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করতে চাই। অস্ট্রেলিয়া সেটি সমর্থন করে না।'

গুডাল প্রথম আলোচনায় আসেন পার্থের এডিথ কোনান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিরোধে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী ছিলেন গুডাল। ২০১৬ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করে গুডাল আর তার গবেষণা কাজের জন্য উপযোগী নন। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের সমালোচনার মুখে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

মৃত্যুর আগে গুডাল বলেছিলেন, এই দীর্ঘ জীবন আর টেনে নিয়ে যেতে পারছেন না। দ্রুত এই জীবনের সমাপ্তি দরকার।

অস্ট্রেলিয়ায় সহায়তায় আত্মহত্যা সংক্রান্ত আইনগুলো রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোর সরকার কর্তৃক কার্যকর হলেও ফেডারেল সরকার খুব গুরুত্ব দিয়ে তা পর্যবেক্ষণ করে।

তাসমানিয়া রাজ্য সরকার ২০২১ সালের মার্চে সহায়তায় মৃত্যুবরণ আইন পাস করেছে যা ২০২২ সালের অক্টোবরে কার্যকর হবে এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ২০২১ সালের জুন মাসে একই আইন পাস করে। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য রাজ্য ও অঞ্চলে ইচ্ছানুযায়ী মৃত্যু এবং স্বেচ্ছামৃত্যু অবৈধ।

১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার উত্তর অঞ্চলে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ ছিল। ফেডারেল সরকার তা বাতিল করে দেয়। আঞ্চলিক সরকার স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাখলেও ফেডারেল সরকার সে আইন বাতিল করতে পারে।

আকিদুল ইসলাম : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Goods worth Tk 16k imported at Tk 2.63 crore

State-run Power Grid Company of Bangladesh Ltd (PGCBL) imported 68 kilograms of tower bolts, nuts and washers from India for a whopping $2,39,695 or Tk 2.63 crore, which is 1,619 times the contract value.

3h ago