অস্ট্রেলিয়া ডে: বঞ্চনা ও উল্লাসের মহাকাব্য 

১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের সূচনা হয়েছিল। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন আদিবাসীদের পরাস্ত করে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ের দেশটি দখলে নিয়েছিল ব্রিটিশরাজ। এই ঐতিহাসিক দিনটিকেই অস্ট্রেলিয়াতে জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হয় ‘অস্ট্রেলিয়া ডে’ হিসেবে। এই দিনে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে একদিকে চলে শ্বেতাঙ্গদের উৎসব; আনন্দ আর উল্লাস, অন্যদিকে বঞ্চিত-নির্যাতিত আদিবাসীরা রাস্তায় নামেন দেশ হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে। ১৯৩৮ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার  আদিবাসীরা উপনিবেশায়নের প্রতিবাদ হিসাবে দিনটিকে শোক ও আগ্রাসন দিবস হিসাবে পালন করে থাকেন।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘দেশ হারানো’ আদিবাসীদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের সূচনা হয়েছিল। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন আদিবাসীদের পরাস্ত করে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ের দেশটি দখলে নিয়েছিল ব্রিটিশরাজ। এই ঐতিহাসিক দিনটিকেই অস্ট্রেলিয়াতে জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হয় 'অস্ট্রেলিয়া ডে' হিসেবে। এই দিনে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে একদিকে চলে শ্বেতাঙ্গদের উৎসব; আনন্দ আর উল্লাস, অন্যদিকে বঞ্চিত-নির্যাতিত আদিবাসীরা রাস্তায় নামেন দেশ হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে। ১৯৩৮ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার  আদিবাসীরা উপনিবেশায়নের প্রতিবাদ হিসাবে দিনটিকে শোক ও আগ্রাসন দিবস হিসাবে পালন করে থাকেন।

১৭৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নোঙর ফেলে ব্রিটিশ নাবিকরা সারা পৃথিবীতে প্রচার করেন যে, তারা অস্ট্রেলিয়া নামের একটি মহাদেশ 'আবিষ্কার' করেছেন। মূলত প্রায় ৫০ হাজার বছর ধরে সেখানে বাস করছিল পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন আদিবাসীরা। তাদের গৃহহীন করে, হত্যা করে দেশটিতে ব্রিটিশ আধিপত্যবাদীরা উড়িয়ে দিয়েছিল উপনিবাসের পতাকা।

অস্ট্রেলিয়ায় ‘দেশ হারানো’ আদিবাসীদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘটনাগুলোর অন্যতম হলো, হাজার হাজার আদিবাসী শিশুকে তাদের পরিবার থেকে জোর করে সরিয়ে নেওয়া। ১৮৬৯ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সরকারি নীতিমালা হিসেবে এইসব শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে এতিমখানা, সরকারি আশ্রম, গীর্জা ও কল্যাণ সংস্থা দ্বারা পরিচালিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। মূলত এসব শিশুদের আদিবাসী সংস্কৃতি, জীবনধারা ও ভাষা থেকে অপসারণ করাই ছিল দখলদারদের মূল লক্ষ্য।

জোর করে অপসারণ করা এই শিশুদের আদিবাসী ঐতিহ্য প্রত্যাখ্যান করতে ও শ্বেতাঙ্গ সংস্কৃতি গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং তাদের নিজ ভাষায় কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার শেতাঙ্গ অধিবাসীদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত

এই নীতিটি গ্রহণ করা হয়েছিল 'শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের' ধারণার উপর ভিত্তি করে। এই নীতির লক্ষ্য ছিলো আদিবাসীদের 'প্রাকৃতিকভাবে নির্মূলকরণ' অথবা তাদের শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করা। এসব শিশুরা যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন ও শোষণের শিকার হতো।

পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার এই আদিবাসীরা তাদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণের বিচার ও স্বীকৃতির জন্য দীর্ঘ এবং কঠিন লড়াই করেছে।

অনেক বছরের লড়াই সংগ্রামের পর অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী আন্দোলন এখন একটা বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন জাতীয় পর্যায়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে চুক্তি, আদিবাসী সার্বভৌমত্ব ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়গুলো জোরালো হয়ে উঠেছে।

২০০৮ সালে আদিবাসীদের প্রতি শেতাঙ্গ পূর্বপুরুষদের নির্মম আচরণের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Jashore records year's highest temperature at 43.8°C

The year's highest temperature of 43.8 degrees Celsius was recorded in the southwestern district of Jashore this afternoon

2h ago